রবিবার, ২১ জুন, ২০১৫

The world's largest mud mosque-পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাটির মসজিদ

The world's largest mud mosque-পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাটির মসজিদ

 মসজিদটির নাম গ্র্যান্ড মস্ক অব ডিজেনি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাটির মসজিদ এটি। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালির ডিজেনি শহরে এর অবস্থান। নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য না থাকলেও ১২০০ শতাব্দী থেকে ১৩০০ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে এটি নির্মিত হয়েছে বলে বেশির ভাগের মত। তবে বর্তমানে যে কাঠামোটি দেখা যায় এটি নির্মাণ করা হয়েছে ১৯০৭ সালে। আর ইউনেস্কো মসজিদসহ এর চার পাশের ঐতিহাসিক স্থানগুলোকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ১৯৮৮ সালে।
যতদূর জানা যায়, সুলতান কুনবরু ইসলাম কবুল করার পর তার প্রাসাদটি ভেঙে সেখানে এই মসজিদটি তৈরি করেন। মসজিদের পূর্ব দিকে নিজের বাসের জন্য তৈরি করেন অন্য একটি প্রাসাদ। তার পরবর্তী উত্তরাধিকারী মসজিদের দু’টি টাওয়ার নির্মাণ করেন এবং তার পরবর্তী উত্তরাধিকারী মসজিদটির চার পাশের দেয়াল নির্মাণ করেন।
তবে ১৮২৮ সালের আগে মসজিদটি সম্পর্কে স্থানীয়রা ছাড়া বাইরের কেউ জানতেন না। সে বছর ফরাসি পর্যটক রেনে ওই এলাকা ভ্রমণ করেন। তিনি তার সফর শেষে লেখেন, ডিজেনি শহরে মাটির তৈরি একটি মসজিদ আছে। মসজিদটির দুই পাশে দু’টি দর্শনীয় কম উচ্চতার টাওয়ার রয়েছে। এর পর থেকে মসজিদটি সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ বাড়তে থাকে।
বানি নদীর তীরে অবস্থিত মসজিদটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে রোদে শুকানো মাটি। মসজিদটি ২৪৫ বাই ২৪৫ ফুট (৭৫ বাই ৭৫ মিটার) আয়তনবিশিষ্ট তিন ফুট উঁচু প্লাটফর্মের ওপর তৈরি। বর্ষাকালে বানি নদীর পানি থেকে এই প্লাটফরম মসজিদটিকে সুরক্ষা করে।
শুধু নকশা নয়, তালগাছের কাঠ মসজিদের দেয়ালে এমনভাবে গেঁথে দেয়া হয়েছে, যাতে মাটির দেয়াল সহজে ধসে না যায়।

মধ্যযুগে আফ্র্রিকার এই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামি শিক্ষা বিস্তারের প্রধান কেন্দ্র ছিল এই মসজিদ। হাজার হাজার শিক্ষার্থী তখন কুরআন শিক্ষার জন্য এই মসজিদে আসতেন।
প্রতি বছর স্থানীয় মুসলমানেরা মসজিদটির সংস্কারকাজ করেন। তবে ২০০৬ সালের ২০ জানুয়ারি মসজিদের ছাদের একটি অংশ এবং ২০০৯ সালের ৫ নভেম্বর দক্ষিণ দিকের টাওয়ারের একটি অংশ ধসে পড়লে ‘দ্য আগা খান ট্রাস্ট কালচার’ নিজস্ব খরচে এটির সংস্কার করে।
১৯৩০ সালে ফ্রান্সে মসজিদটির একটি রেপ্লিকা তৈরি করা হয়। লাল রঙের রেপ্লিকটি ইট দিয়ে তৈরি।
Dijeni of the Grand Mosque mosque. It is the world's largest mud mosque. Dijeni in the West African nation of Mali's position. Although there is no precise information about the building of the century between 1300 and 1200 AD, the majority of the time it was built. However, it can be seen that the structure had been built in 1907. The mosque's four UNESCO World Heritage listed as the historic places in 1988.As far as is known, to embrace Islam Sultan kunabaru broke his palace mosque was built there. For the east side of the bus, made himself a palace. The two towers, was built next to his successor and the successor of the four side walls of the mosque was built.In 1828, before the building of the local people did not know anyone except the outside. That year, the French traveler Rene traveled to the area. At the end of his tour, he wrote, a mosque made of mud dijeni town. The low height of the towers on either side of the mosque is spectacular. The interest of the people of the mosque continues to grow.

Bani, the river has been used to build the mosque in the sun to dry soil. Its 45-by-45-foot (75-by-75-meter) high platform made about three feet marker. Bani rivers during the rainy season to protect the mosque from this platform.Not just the design, trees, wood walls of the mosques have been built in such a way, so that the mud walls do not collapse easily.Aphrrikara the Middle Ages, this region was the center of the main mosque of the Islamic teachings. Thousands of students come to the mosque for the study of the Quran.Every year the local Muslim mosque reforms. However, a portion of the roof of the mosque and in January 006 0 009 5 November, a portion of the south tower collapsed, "the Aga Khan Trust for Culture," by reforming its own cost.In 1930, a replica of the mosque is made in France. Replikati made of red brick

সোমবার, ২ মার্চ, ২০১৫

আল মাআরিজ-70

 আল মাআরিজ-70
 
১.) এক প্রার্থনাকারী আযাব প্রার্থনা করেছে
 
২.) যে আযাব কাফেরের জন্য অবধারিত।  তা প্রতিরোধ করার কেউ নেই।
 
৩.) আল্লাহর পক্ষ থেকে, যিনি উর্ধ্বারোহণের সোপান সমূহের অধিকারী
 
৪.) ফেরেশতারা এবং রূহ তার দিকে উঠে যায় এমন এক দিনে যা পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান।
 
৫.) অতএব, হে নবী, তুমি উত্তম ধৈর্য ধারণ করো।
 
৬.) তারা সেটিকে অনেক দূরে মনে করেছে।
 
৭.) কিন্তু আমি দেখছি তা নিকটে।
 
৮.) (যেদিন সেই আযাব আসবে) সেদিন আসমান গলিত রূপার মত বর্ণ ধারণ করবে।
 
৯.) আর পাহাড়সমূহ রংবেরং-এর ধুনিত পশমের মত হয়ে যাবে। ১০
 
১০.) কোন পরম বন্ধুও বন্ধুকে জিজ্ঞেস করবে না।
 
১১.) অথচ তাদেরকে পরস্পরে দৃষ্টি সীমার মধ্যে রাখা হবে।১১ অপরাধী সেদিনের আযাব থেকে মুক্তির বিনিময়ে তার সন্তান-সন্ততিকে,
 
১২.) স্ত্রীকে, ভাইকে এবং
 
১৩.) তাকে আশ্রয়দানকারী জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর আপনজনকে
 
১৪.) এমনকি, পৃথিবীর সবকিছুই দিতে চাইবে।
 
১৫.) কখনো নয়, তা তো হবে জলন্ত আগুনের লেলিহান শিখা
 
১৬.) যা শরীরের গোশত ও চামড়া ঝলসিয়ে নিঃশেষ করে দেবে।
 
১৭.) তাদেরকে সে অগ্নিশিখা উচ্চ স্বরে নিজের কাছে ডাকবে, যারা সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছিল
 
১৮.) আর সম্পদ জমা করে ডিমে তা দেয়ার মত করে আগলে রেখেছিল ১২
 
১৯.) মানুষকে ছোট মনের অধিকারী করে সৃষ্টি করা হয়েছে।১৩
 
২০.) বিপদ-মুসিবতে পড়লেই সে ঘাবড়ে যায়,
 
২১.) আর যে-ই সচ্ছলতার মুখ দেখে অমনি সে কৃপণতা করতে শুরু করে।
 
২২.) তবে যারা নামায পড়ে ১৪ (তারা এ দোষ থেকে মুক্ত) ।
 
২৩.) যারা নামায আদায়ের ব্যাপারে সবসময় নিষ্ঠাবান।১৫
 
২৪.) যাদের সম্পদে নির্দিষ্ট হক আছে
 
২৫.) প্রার্থী ও বঞ্চিতদের।১৬
 
২৬.) যারা প্রতিফলের দিনটিকে সত্য বলে মানে। ১৭
 
২৭.) যারা তাদের প্রভুর আযাবকে ভয় করে।১৮
 
২৮.) কারণ তাদের প্রভুর আযাব এমন বস্তু নয় যে সম্পর্কে নির্ভয় থাকা যায়।
 
২৯.) যারা নিজেদের লজ্জাস্থান নিজের স্ত্রী অথবা মালিকানাধীন স্ত্রীলোকদের ছাড়া অন্যদের থেকে হিফাযত করে। ১৯
 
৩০.) স্ত্রী ও মালিকানাধীন স্ত্রীলোকদের ক্ষেত্রে তারা তিরস্কৃত হবে না।
 
৩১.) তবে যারা এর বাইরে আর কেউকে চাইবে তারা সীমালংঘনকারী।২০
 
৩২.) যারা আমানত রক্ষা করে ও প্রতিশ্রুতি পালন করে।২১
 
৩৩.) আর যারা সাক্ষ্য দানের ক্ষেত্রে সততার ওপর অটল থাকে। ২২
 
৩৪.) যারা নামাযের হিফাযত করে।২৩
 
৩৫.) এসব লোক সম্মানের সাথে জান্নাতের বাগানসমূহে অবস্থান করবে।
 
৩৬.) অতএব হে নবী, কি ব্যাপার যে, এসব কাফের তোমার দিকে ছুটে আসছে?২৪
 
৩৭.) ডান দিকে ও বাম দিক হতে দলে দলে
 
৩৮.) তাদের প্রত্যেকে কি এ আশা করে যে, তাকে প্রাচুর্যে ভরা জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হবে?২৫
 
৩৯.) কখখনো না। আমি যে জিনিস দিয়ে তাদের সৃষ্টি করেছি তারা নিজেরা তা জানে।২৬
 
৪০.) অতএব না, ২৭ আমি শপথ করছি উদয়াচল ও অস্তাচলসমূহের মালিকের।২৮ আমি তাদের চাইতে উৎকৃষ্টতর লোকদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করতে সক্ষম।
 
৪১.) আমাকে পেছনে ফেলে যেতে পারে এমন কেউ-ই নেই।২৯
 
৪২.) অতএব তাদেরকে অর্থহীন কথাবার্তা ও খেল- তামাসায় মত্ত থাকতে দাও, যেদিনটির প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেয়া হচ্ছে যতদিন না সেদিনটির সাক্ষাত তারা পায়।
 
৪৩.) সেদিন তারা কবর থেকে বেরিয়ে এমনভাবে দৌড়াতে থাকবে যেন তারা নিজেদের দেব-প্রতিমার আস্তানার দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে।৩০
 
৪৪.) সেদিন চক্ষু হবে আনত, লাঞ্চনা তাদের আচ্ছন্ন করে রাখবে। ঐ দিনটিই সেদিন যার প্রতিশ্রুতি এদেরকে দেয়া হচ্ছে।

নামকরণ

সূরার তৃতীয় আয়াতের ذِى الْمَعَارِجْ যিল মা'আরিজি শব্দটি থেকে এর নামকরণ হয়েছে।

নাযিল হওয়ার সময়-কাল

কাফেররা কিয়ামত, আখেরাত এবং দোযখ ও বেহেশত সম্পর্কিত বক্তব্য নিয়ে বিদ্রূপ ও উপহাস করতো এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ মর্মে চ্যালেঞ্জ করতো যে, তুমি যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো আর তোমাকে অস্বীকার করে আমরা জাহান্নামের শাস্তিলাভের উপযুক্ত হয়ে থাকি তাহলে তুমি আমাদেরকে যে কিয়ামতের ভয় দেখিয়ে থাকো তা নিয়ে এসো। যে কাফেররা এসব কথা বলতো এ সূরায় তাদের সতর্ক করা হয়েছে এবং উপদেশ বাণী শোনানো হয়েছে। তাদের এ চ্যালেঞ্জের জবাবে এ সূরার গোটা বক্তব্য পেশ করা হয়েছে।
সূরার প্রথমে বলা হয়েছে প্রার্থনাকারী আযাব প্রার্থনা করছে। নবীর দাওয়াত অস্বীকারকারীর ওপর সে আযাব অবশ্যই পতিত হবে। আর যখন আসবে তখন কেউ তা প্রতিরোধ করতে পারবে না। তবে তার আগমন ঘটবে নির্ধারিত সময়ে। আল্লাহর কাজে দেরী হতে পারে। কিন্তু তার কাছে বেইনসাফী বা অবিচার নেই। কিন্তু আমি দেখছি তা অতি নিকটে।
এরপর বলা হয়েছে, এসব লোক হাসি-ঠাট্টাচ্ছলে কিয়ামত দ্রুত নিয়ে আসার দাবি করছে। অথচ কত কঠোর ও ভয়ানক সেই কিয়ামত।যখন তা আসবে তখন এসব লোকের কি যে ভয়ানক পরিণতি হবে। সে সময় এরা আযাব থেকে বাঁচার জন্য নিজের স্ত্রী, সন্তান-সন্তুতি এবং নিকট আত্মীয়দেরকে বিনিময় স্বরূপ দিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। কিন্তু কোনভাবেই আযাব থেকে নিষ্কৃতি লাভ করতে পারবে না।
এরপর মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, সেদিন মানুষের ভাগ্যের ফায়সালা হবে সম্পূর্ণরূপে তাদের আকীদা-বিশ্বাস নৈতিক চরিত্র ও কৃতকর্মের ভিত্তিতে। দুনিয়ার জীবনে যারা ন্যায় ও সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং ধন-সম্পদ জমা করে ডিমে তা দেয়ার মত সযত্নে আগলে রেখেছে তারা হবে জাহান্নামের উপযুক্ত। আর যারা আল্লাহর, আযাবের ভয়ে ভীত থেকেছে। আখেরাতকে বিশ্বাস করেছে, নিয়মিত নামায পড়েছে, নিজের উপার্জিত সম্পদ দিয়ে আল্লাহর অভাবী বান্দাদের হক আদায় করেছে, ব্যভিচার থেকে নিজেকে মুক্ত রেখেছে, আমানতের খেয়ানত করেনি, ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি এবং কথাও কাজ যথাযথভাবে রক্ষা করে চলেছে এবং সাক্ষ্যদানের বেলায় সত্যবাদিতার ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকেছে তারা সম্মান ও মর্যাদার সাথে জান্নাতে স্থান লাভ করবে।
পরিশেষে মক্কার কাফেরদের সাবধান করা হয়েছে যারা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখামাত্র বিদ্রূপ ও উপহাস করার জন্য চারদিক থেকে ঝাঁপিয়ে পড়তো। তাদেরকে বলা হয়েছে যদি তোমরা তাঁকে না মানো তাহলে আল্লাহ তা'আলা অন্যদেরকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই বলে উপদেশ দেয়া যেন তিনি এসব উপহাস- বিদ্রূপের তোয়াক্কা না করেন। এরা যদি কিয়ামতের লাঞ্ছনা দেখার জন্যই জিদ ধরে থাকে তাহলে তাদেরকে এ অর্থহীন তৎপরতায় লিপ্ত থাকতে দিন। তারা নিজেরাই এর দুঃখজনক পরিণতি দেখতে পাবে।

নূহ-71

নূহ-71 
 
১.) আমি নূহকে তাঁর জাতির কাছে পাঠিয়েছিলাম (এ নির্দেশ দিয়ে) যে, একটি কষ্টদায়ক আযাব আসার আগেই তুমি তাদেরকে সাবধান করে দাও।
 
২.) সে বললো, হে আমার জাতি, আমি তোমাদের জন্য একজন সতর্ককারী
 
৩.) (বার্তাবাহক, আমি তোমাদের জানিয়ে দিচ্ছি) যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তাঁকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো,
 
৪.) আল্লাহ তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদের অবকাশ দেবেন। প্রকৃত ব্যাপার হলো, আল্লাহর নির্ধারিত সময় যখন এসে যায় তখন তা থেকে বাঁচা যায় না। আহ্! যদি তোমরা তা জানতে।
 
৫.) সে বললোঃ হে আমার বর, আমি আমার কওমের লোকদের রাত-দিন আহবান করেছি।
 
৬.) কিন্তু আমার আহবান তাদের দূরে সরে যাওয়াকে কেবল বাড়িয়েই তুলেছে।
 
৭.) তুমি যাতে তাদের ক্ষমা করে দাও এ উদ্দেশ্যে আমি যখনই তাদের আহবান করেছি তখনই তারা কানে আঙুল দিয়েছে,১০ এবং কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে নিয়েছে, নিজেদের আচরণে অনড় থেকেছে এবং অতিমাত্রায় ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছে।১১
 
৮.) অতঃপর আমি তাদেরকে উচ্চকণ্ঠে আহবান জানিয়েছি।
 
৯.) তারপর প্রকাশ্যে তাদের কাছে তাবলীগ করেছি এবং গোপনে চুপে চুপে বুঝিয়েছি।
 
১০.) আমি বলেছি তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা চাও। নিঃসন্দেহে তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল।
 
১১.) তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষাবেন।
 
১২.) সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন, তোমাদের জন্য বাগান সৃষ্টি করবেন আর নদী-নালা প্রবাহিত করে দিবেন।১২
 
১৩.) তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর মাহাত্ম্য, শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা আছে বলে মনে করছো না।১৩
 
১৪.) অথচ তিনিই তোমাদের পর্যায়ক্রমে সৃষ্টি করেছেন।১৪
 
১৫.) তোমরা কি দেখো না, আল্লাহ‌ কিভাবে সাত স্তরে বিন্যস্ত করে আসমান সৃষ্টি করেছেন?
 
১৬.) ওগুলোর মধ্যে চাঁদকে আলো এবং সূর্যকে প্রদীপ হিসেবে স্থাপন করেছেন।
 
১৭.) আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে মাটি থেকে বিস্ময়কররূপে উৎপন্ন করেছেন।১৫
 
১৮.) আবার এ মাটির মধ্যে তোমাদের ফিরিয়ে নেবেন এবং অকস্মাৎ এ মাটি থেকেই তোমাদের বের করে আনবেন।
 
১৯.) আল্লাহ ভূপৃষ্ঠকে তোমাদের জন্য বিছানার মত করে পেতে দিয়েছেন।
 
২০.) যেন তোমরা এর প্রশস্ত পথে চলতে পারো
 
২১.) নূহ বললোঃ হে প্রভু, তারা আমার কথা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ঐসব নেতার অনুসরণ করেছে যারা সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পেয়ে আরো বেশী ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে।
 
২২.) এসব লোক সাংঘাতিক ষড়যন্ত্র-জাল বিস্তার করে রেখেছে।১৬
 
২৩.) তারা বলেছে, তোমরা নিজেদের দেব-দেবীদের কোন অবস্থায় পরিত্যাগ করো না। আর ওয়াদ, সুওয়া’আ, ইয়াগুস, ইয়াউক এবং নাসরকেও১৭ পরিত্যাগ করো না।
 
২৪.) অথচ এসব দেব-দেবী বহু লোককে গোমরাহীতে নিক্ষেপ করেছে। তুমিও এসব জালেমদের জন্য গোমরাহী ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করো না।১৮
 
২৫.) নিজেদের অপরাধের কারণেই তাদের নিমজ্জিত করা হয়েছিল তারপর আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।১৯ অতঃপর তারা আল্লাহর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কোন সাহায্যকারী পায়নি।২০
 
২৬.) আর নূহ বললোঃ হে আমার রব, এ কাফেরদের কাউকে পৃথিবীর বুকে বসবাসের জন্য রেখো না।
 
২৭.) তুমি যদি এদের ছেড়ে দাও তাহলে এরা তোমার বান্দাদের বিভ্রান্ত করবে এবং এদের বংশে যারাই জন্মলাভ করবে তারাই হবে দুষ্কৃতকারী ও কাফের।
 
২৮.) হে আমার রব, আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যারা মু’মিন হিসেবে আমার ঘরে প্রবেশ করেছে তাদেরকে এবং সব মু’মিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করে দাও। জালেমদের জন্য ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করো না।

নামকরণ

‘নূহ’ এ সূরার নাম। এর বিষয়বস্তুর শিরোনামও ‘নূহ’। কারণ এতে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত হযরত ‘নূহ’ আলাইহিস সালামের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।

নাযিল হওয়ার সময়-কাল

এটিও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কী জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে নাযিল হওয়া সূরাসমূহের অন্যতম। তবে এর বিষয়বস্তুর আভ্যন্তরীণ সাক্ষ্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, যে সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত ও তাবলীগের বিরুদ্ধে মক্কার কাফেরদের শত্রুতামূলক আচরণ বেশ তীব্রতা লাভ করেছিল তখন এ সূরাটি নাযিল হয়েছিল।

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য

এতে হযরত নূহ আলাইহিস সালামের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। তবে তা কেবল কাহিনী বর্ণনার উদ্দেশ্যে করা হয়নি।বরং এর উদ্দেশ্য মক্কার কাফেরদের এ মর্মে সাবধান করা যে, হযরত নূহ আলাইহিস সালামের সাথে তার কওম যে আচরণ করেছিল তোমরাও হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সে একই আচরণ করছো। তোমরা যদি এ আচরণ থেকে বিরত না হও তাহলে তোমাদেরও সে একই পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে যার সম্মুখীন হয়েছিল ঐসব লোকেরা। গোটা সূরার মধ্যে একথাটি স্পষ্ট ভাষায় কোথাও বলা হয়নি। কিন্তু যে অবস্থা ও পরিস্থিতিতে মক্কীবাসীদের এ কাহিনী শুনানো হয়েছে তার পটভূমিতে এ বিষয়টি আপনা থেকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
যে সময় আল্লাহ তা’আলা হযরত নূহ আলাইহিস সালামকে রিসালাতের পদ মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছিলেন সে সময় তাঁর ওপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন প্রথম আয়াতে তা বলা হয়েছে।
তিনি তাঁর দাওয়াত কিভাবে শুরু করেছিলেন এবং স্বজাতির মানুষের সামনে কি বক্তব্য পেশ করেছিলেন।
২ থেকে ৪ পর্যন্ত আয়াতে তা সংক্ষিপ্তাকারে বলা হয়েছে, এরপর দীর্ঘকাল পর্যন্ত দ্বীনের দাওয়াত ও তাবলীগের জন্য অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট বরণ করার পর তার যে বর্ণনা হযরত নূহ আলাইহিস সালাম আল্লাহর দরবারে পেশ করেছিলেন ৫ থেকে ২০ আয়াতে তা বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি তাঁর জাতিকে সত্য পথে আনার জন্য কিভাবে চেষ্টা-সাধনা করেছেন আর তাঁর জাতির লোকেরা কি রকম হঠকারিতার মাধ্যমে তার বিরোধিতা করেছে এ পর্যায়ে তিনি তার সবই তাঁর প্রভুর সামনে পেশ করেছেন।
এরপর ২১ থেকে ২৪ আয়াতে হযরত নূহ আলাইহিস সালামের শেষ আবেদনের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এতে তিনি মহান আল্লাহর কাছে এ মর্মে আবেদন করেছেন যে, এ জাতি আমার দাওয়াত চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। এরা তাদের নেতাদের হাতে নিজেদের লাগাম তুলে দিয়েছে এবং বিরাট ও ব্যাপক ষড়যন্ত্র-জাল বিস্তার করেছে। এখন তাদের থেকে হিদায়াত গ্রহণ করার শুভবুদ্ধি ও যোগ্যতা ছিনিয়ে নেয়ার সময় এসে গেছে। হযরত নূহ আলাইহিস সালামের পক্ষ থেকে এটা কোন প্রকার অধৈর্যের বহিঃপ্রকাশ ছিল না। বরং শত শত বছর ধরে ধৈর্যের চরম পরীক্ষার মত পরিবেশ-পরিস্থিতির মধ্যে দ্বীনের তাবলীগের দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়ার পর যে সময় তিনি তাঁর কওমের ব্যাপারে পুরোপুরি নিরাশ হয়ে গেলেন কেবল তখনই তিনি এ সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন যে, এখন এ জাতির সত্য ও ন্যায়ের পথে আসার আর কোন সম্ভাবনাই নেই। তাঁর এ সিদ্ধান্ত ছিল হুবহু আল্লাহ তা’আলার ফায়সালার অনুরূপ। তা-ই এর পরবর্তী ২৫ আয়াতেই বলা হয়েছে। এ জাতির কৃতকর্মের কারণে তাদের ওপর আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে আযাব নাযিল হলো।
আযাব নাযিল হওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম আল্লাহ তা’আলার কাছে যে দোয়া করেছিলেন শেষ আয়াতটিতে তা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে তিনি নিজের ও ঈমানদারদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং নিজ কওমের কাফেরদের জন্য এ মর্মে আল্লাহর কাছে আবেদন করছেন যেন তাদের কাউকেই পৃথিবীর বুকে বসবাস করার জন্য জীবিত রাখা না হয়, কারণ তাদের মধ্যে এখন আর কোন কল্যাণই অবশিষ্ট নেই। তাই তাদের ঔরসে এখন যারাই জন্মলাভ করবে তারাই কাফের এবং পাপী হিসেবেই বেড়ে উঠবে।
এ সূরা অধ্যয়নকালে ইতিপূর্বে কুরআন মজীদে হযরত নূহ আলাইহিস সালামের কাহিনীর যে বিস্তারিত ব্যাখ্যা পেশ করা হয়েছে তাও সামনে থাকা দরকার। দেখুন সূরা আল আ’রাফ, আয়াত ৫৯ থেকে ৬৪; ইউনূস, ৭১ থেকে ৭৩; হুদ, ২৫ থেকে ৪৯; আল মু’মিনূন, ২৩ থেকে ৩১; আশ শু’আরা, ১০৫ থেকে ১২২; আল আনকাবুত, ১৪ ও ১৫, আস সাফফাত, ৭৫ থেকে ৮২ এবং আল কামার, ৯ থেকে ১৬ আয়াত পর্যন্ত।