মুসলিম বিশ্বে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ
উপরোক্ত তিনটি মন্তব্য মিথ্যা প্রমাণ
করার সাধ্য
কারোর নেই।
তবুও মুসলিম
দুনিয়ায় ধর্মনিরপেক্ষতার
প্রসার কেমন
করে হল
? আধুনিক শিক্ষায়
শিক্ষিত এক
শ্রেণীর মুসলিম
সর্বত্র ইসলামকেও
পাদ্রীদের ধর্মের ন্যায় উন্নতি ও
প্রগতি বিরোধী
মনে করছে।
এর কারণ
বিশ্লেষণ করে
নিম্নলিখিত তথ্য পাওয়া যায় :
১. মুসলিম
বিশ্বে যারা
জ্ঞান চর্চা
করেছেন তাদের
অনেকেই ইসলাম
সম্পর্কে অনেক
অমুসলিম চিন্তানায়কের
চেয়েও কম
জানেন। তারা
অনেক মোটা
মোটা বই
মুখস্থ করেছেন
কিন্তু কুরআন
ও হাদীস
অধ্যয়ন করার
সুযোগ পাননি
হয়তো-বা
প্রয়োজনও বোধ
করেননি। অপরদিকে
মুসলমানদের মধ্যে যারা কুরআন ও
হাদীসের গবেষণা
করেছেন, তাঁদের
অধিকাংশই আধুনিক
জ্ঞান-বিজ্ঞানের
অধ্যয়ন না
করার ফলে
এবং পার্থিব
জীবনকে সর্বদিক
দিয়ে ইসলামী
দৃষ্টিভঙ্গীতে বিচার করা সুযোগের অভাবে
গোটা মুসলিম
সমাজকে যোগ্য
নেতৃত্ব দান
করতে অক্ষম।
দীর্ঘকাল অনৈসলামী
শাসনের ফলে
ইসলামী মন-মগজ ও
চরিত্র বিশিষ্ট
ব্যক্তিদের নেতৃত্ব জীবনের সকল দিক
থেকেই উৎখাত
হওয়া স্বাভাবিক
ছিল। ফলে
আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ
অথচ ইসলামী
মন-মস্তিষ্ক
শূন্য মুসলমানদের
নেতৃত্বই প্রতিষ্ঠা
লাভ করল।
এ নেতৃত্বের
পক্ষে ইসলামী
সমাজ ব্যবস্থা
প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করা এবং যে
কোন পন্থায়
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রতিষ্ঠার পথ
মুক্ত করার
চেষ্টায় প্রবৃত্ত
হওয়া মোটেই
বিস্ময়কর নয়।
২. মানব
সভ্যতার ইতিহাস
থেকে একথা
প্রমাণিত হয়
যে, জ্ঞান
সাধনা, তথ্যনুসন্ধান
ও চিন্তা
গবেষণার ইঞ্জিনই
বিশ্বের এই
বিরাট গাড়ীখানাকে
টেনে নিয়ে
চলছে। চিন্তানায়ক
সাধকরাই উক্ত
ইঞ্জিনের পরিচালক
। তাদের
মর্জি অনুযায়ী
গোটা গাড়ীর
সকল যাত্রীকেই
চলতে হয়।
যদ্দিন মুসলমান
জাতি চিন্তার
ক্ষেত্রে নেতৃত্ব
দিচ্ছিল তদ্দিন
ইসলামী চিন্তাধারাই
মানব জাতিকে
প্রভাবান্বিত করেছিল। সত্য ও মিথ্যা,
সুন্দর ও
অসুন্দর, ভাল
ও মন্দের
ইসলামী মাপকাঠিই
তখন একমাত্র
গ্রহণযোগ্য ছিল। ধর্মনিরপেক্ষতার আন্দোলনের ফলে
বর্তমান খোদাহীন
চিন্তাধারার বন্যার মুখে ইসলামী জ্ঞান
বঞ্চিত মুসলিমদের
ভেসে যাওয়াই
স্বাভাবিক। কাজেই পাশ্চাত্যের নেতৃত্বে আধুনিক
জ্ঞান সাধনার
যে ইঞ্জিন
দুর্বার গতিতে
মানবজাতিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তাতে
মুসলিম নামধারীদের
এমনকি ধার্মিক
বলে পরিচিত
বহু মুসলমানেরর
প্রভান্বিত হওয়া বিস্ময়কর নয়।
চিন্তার ক্ষেত্রে পূর্ণ দাসত্ব মুসলিম
নেতৃত্বকে পঙ্গু করে রেখেছে। তারা
ইউরোপের উস্তাদদের
নিকট নৈতিক
ও মানসিক
আত্মা বিক্রয়ের
মাধ্যমে বিশ্বস্ত
শাগরিদের ন্যায়
পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুসরণ করে চলেছেন।
তাদের স্বাধীন
মন মগজ
বা চক্ষু
আছে বলে
মনে হয়
না। তারা
পাশ্চাত্যের চক্ষু দ্বারা সুন্দর অসুন্দরের
সিদ্ধান্ত নেন; ইউরোপের মগজ দিয়ে
উন্নতি অবনতির
হিসাব করেন
এবং উস্তাদদের
মন দিয়েই
ভালমন্দের বিচার করেন।
ইউরোপের এসব মানস সন্তানগণ যদি
মানসিক দাসত্ব
ত্যাগ না
করেন তাহলে
একদিন রাজনৈতিক
দাসত্বই এর
স্বাভাবিক পরিণতি হিসাবে স্বাধীন মুসলিম
দেশগুলোর উপর
নেমে আসবে।
প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ থাকা সত্ত্বেও
মুসলিম দেশগুলো
আজ এ
কারণেই বিভিন্ন
জাতির অর্থনৈতিক
ও সাংস্কৃতিক
গোলামে পরিণত
হতে চলেছে।
যুক্তির মানদন্ডে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ইতিহাস পাঠ
করে কারো
এ ধারণা
করা উচিত
নয় যে,
পনের শতাব্দীর
পূর্বে কোন
কালেই এ
মতবাদ দুনিয়ার
প্রচলিত ছিল
না। প্রকৃতপক্ষে
পূর্ণাঙ্গ ধর্মের সাথে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের লড়াই চিরন্তন। যখনই আল্লাহর
নিকট থেকে
প্রাপ্ত পূর্ণাঙ্গ
জীবন বিধান
মানব সমাজে
কায়েম করার
উদ্দেশ্যে নবী ও রাসূলগণ আওয়াজ
তুলেছেন তখনই
শাসক শ্রেণীর
পক্ষ থেকে
নানা অজুহাতে
প্রবল বিরোধিতা
হয়েছে ।
ইব্রাহীম (আ) এর সময় নমরুদ
ও মূসা
(আ) এর
সময় ফিরআউন
কঠোরভাবে পূর্ণাঙ্গ
ধর্মের বিরোধিতা
করেছে। অথচ
তারা আল্লাহকে
সৃষ্টিকর্তা হিসাবে স্বীকার করত। ধর্মকে
কোন সময়ই
তারা অস্বীকার
করেনি। নমরুদের
দরাবরে রাজ
পুরোহিত ছিল
ইব্রাহীম (আ) এর পিতা আযর।
আল্লাহকে ও
ধর্মকে জীবনের
সর্বক্ষেত্রে পরিচালক শক্তি হিসাবে গ্রহণ
করতে তারা
কিছুতেই রাজী
ছিলনা ।
সুতরাং আধুনিক
পরিভাষায় তাদেরকেও
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীই বলতে হবে।
হযরত মুহাম্মাদ
(সা) এর
যুগে আবু
লাহাব এবং
আবু জেহেল
ধর্মনিরপেক্ষতাদীই ছিল ।
যুক্তি ও বিবেকের দৃষ্টিতে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ
প্রাচীন ও আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা তাদেও মতবাদকে কোন দিক
দিয়েই মযবুত
যুক্তি দ্বারা
দুর্ভেদ্য করে তুলতে পারেনি। দলিল
প্রমাণের পরিবর্তে
তারা সর্বদাই
অন্ধ শক্তির
আশ্রয় গ্রহণ
করতে বাধ্য
হয়েছে। শাসন
ও অর্থশক্তি
প্রয়োগ করেই
তারা গায়ের
জোরে ধর্ম
নিরপেক্ষতাবাদকে কায়েম রাখতে চেষ্টা করে।
যুক্তির কষ্টিপাথরে
যাচাই করলে
ধর্মরিপেক্ষতাবাদের ন্যায় অবৈজ্ঞানিক
মতবাদ আর
কিছুই নেই
বলে মনে
হয়। অথচ
আশ্চর্য ব্যাপার
যে, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরাই
সবচেয়ে বেশী
বুদ্ধি ও
জ্ঞানের দোহাই
পড়েন। তাই
যুক্তি ও
বিবেকের দৃষ্টিতে
ধর্মনিরপেক্ষতার বিশ্লেষণ হওয়া প্রয়োজন।
(১) এ
বিশ্বের যদি
কোন স্রষ্টা
থাকেন এবং
সমগ্র বস্তুজগতে
যদি তার
দেয়া প্রাকৃতিক
বিধানসমূহ কার্যকর বলে স্বীকৃত হয়,
তাহলে সেই
মহাশক্তিশালী স্রষ্টাকে মানুষের জীবনে একটি
কার্যকর শক্তি
হিসেবে গ্রহণ
করতে আপত্তি
করার কি
কারণ থাকতে
পারে? প্রাকৃতিক
জগতে কোন
ক্ষুদ্রতম বিধানকে বদলীয়ে দেবার ক্ষমতা
মানুষের নেই।
এমনকি মানুষ
তার আপন
শারীরিক বিধিও
ইচ্ছা মত
পরিবর্তন করে
সুস্থ থাকতে
পারে না।
এমতাবস্থায় মানব জীবনে সামঞ্জস্য ও
শৃংখলা বিধানের
জন্য কোন
বিধি ব্যবস্থা
বিশ্ব স্রষ্টার
নিকট থেকে
গ্রহণ না
করার সিদ্ধান্তকে
কিরূপে যুক্তিভিত্তিক
বলে মেনে
নেয়া যায়?
যিনি জীব
জগৎ, উদ্ভিত জগৎ
ও সৌরমন্ডলে
শান্তি ও
স্থিতিশীলতার বিধান দিয়েছেন তাঁকে মানব
জাতির জন্য
বিধানদাতা হিসাবে স্বীকার করায় আপত্তি
কেন ?
প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা এখানে
মুনাফেকীর আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে
। ‘আল্লাহ
নেই’ বলে
ঘোষণা করবার
দুঃসাহস করা
বুদ্ধিমানের কাজ নয় মনে করেই
তারা ধূর্ততার
বক্রপথ অবলম্বন
করে থাকে।
বাস্তব ক্ষেত্রে
নিয়মতান্ত্রিক শাসনকর্তার
( Constitutional head ) ন্যায় প্রভাবহীন এক
দুর্বল সত্তা
হিসাবে আল্লাহকে
স্বীকার করে
তারা স্রষ্টার
বিশ্বাসীদেরকে ধোঁকা দেবার অপরূপ কৌশল
ফেঁদেছে ।
এ পন্থায়
বাহ্যিক আচার
অনুষ্ঠান সর্বস্ব
ধর্মে তুষ্ট
এক শ্রেণীর
ভীরু লোক
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে স্বীকার করেও
আল্লাহকে খুশী
করা যায়
বলে বিশ্বাস
করে। আর
শাসন শক্তির
ধারক ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা
এ ভীরু
ধার্মিকদের সমর্থনেই টিকে থাকার চেষ্টা
করে। এ
সমর্থনটুকুর জন্যই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী
শাসকরা আল্লাহকে
অবিশ্বাস করলেও
মুখে স্বীকার
করে থাকে।
(২) ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা
আল্লাহকে ব্যক্তিগত
জীবনে আনুগত্যের
অধিকারী বলে
স্বীকার করে
এবং সমাজ
জীবনে আল্লাহ
ও ধর্মকে
মানার প্রয়োজন
নেই বলে
ঘোষণা করে।
এখানে প্রশ্ন
হল, কোন
দলিলের ভিত্তিতে
তারা আল্লাহর
মতকে ব্যক্তিগত
এলাকায় সীমাবব্ধ
করেন ? আল্লাহ
কি কোথাও
এ বিষয়
কোন ইঙ্গিত
দিয়েছেন। ব্যক্তিগত
জীবনে আল্লাহর
উদ্দেশ্যে কিছু পূজা পার্বন ও
নামায রোযার
অনুষ্ঠান পালন
করলেই তিনি
সন্তুষ্ট হবেন
এবং জীবনের
অন্যান্য ক্ষেত্রে
নিজ বুদ্ধি
অনুযায়ী যার
যেরূপ খুশী
জীবন যাপন
করলেও আল্লাহর
কোন আপত্তি
নেই বলে
কোন নবীর
নিকট ওহী
নাযিল হয়েছে
কি ? আল্লাহ
যদি নিজে
তাঁর আনুগত্যের
দাবীকে মানুষের
ব্যক্তি জীবনে
সীমাবদ্ধ করে
না থাকেন
তাহলে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের
নির্দেশেই কি আল্লাহকে সমাজ জীবনে
অমান্য করা
বুদ্ধিমানের কাজ হবে?
আল্লাহ যদি মানুষের পারিবারিক, সামাজিক,
রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও জীবনের অন্যান্য
ক্ষেত্রে মানুষের
জন্য কোন
বিধান না-ই দিয়ে
থাকেন তাহলে
এমন শক্তিকে
ব্যক্তিগত জীবনেই পূজা করার প্রয়োজন
কি ? মানুষের
জীবনে চলার
পথের সঠিক
সন্ধান যিনি
দিতে পারেন
না তাঁর
উদ্দেশ্য প্রার্থনা
করার প্রেরণা
কিরূপে জাগবে?
সমস্যা সংকুল
পার্থিব জীবনে
যিনি আমাদের
শান্তির পথ
দেখান না
তিনি পরকালে
শান্তি দেবেন
বলে ভরসা
করা একেবারেই
অর্থহীন। তিনি
সমগ্র বিশ্বকে
সৃষ্টি করার
পর এর
উপর ক্ষমতা
প্রয়োগ করতে
সক্ষম নন
বলে মনে
করার কারণ
কি ? গোটা
সৃষ্টিজগৎ কঠোর নিয়মের রাজত্ব মেনে
চলছে ।
এ নিয়মাবলী
যিনি সৃষ্টি
করেছেন তার
আনুগত্যকে মন্দির, গীর্যা ও মসজিদের
সীমাবদ্ধ করে
রাখবার ধৃষ্টতা
কেন? মানব
জীবনে তাঁকে
সক্রিয় শক্তি
হিসাবে স্বীকার
না করার
কোন যুক্তি
থাকতে পারে
কি?
(৩) যিনি
এ বিশাল
বিশ্বের ক্ষুদ্র,
বৃহৎ দৃশ্য, অদৃশ্য যাবতীয় সৃষ্টি
পরিচালনা করেছেন
জ্ঞানের দিক
দিয়ে কোন
বিষয়ে তাঁর
ক্রটি থাকা
কিছুতেই সম্ভব
নয়। মহাজ্ঞানী
‘হাকিম’ ও
‘আলীম’ না
হলে তাঁর
পক্ষে অগণিত
গ্রহ- উপগ্রহ
খচিত শুন্যমন্ডলে
শৃঙ্খলা রক্ষা
করা অসম্ভব
হতো। মানুষের
জটিল শরীর
বিজ্ঞানের যাবতীয় নিয়ম-কানুন যিনি
তৈরী করেছেন,
একমাত্র তিনিই
মানব জীবনে
শান্তি স্থাপনের
পথনির্দেশ করতে সক্ষম । শারীরিক
সুস্থতার জন্য
যেমন আল্লাহর
প্রাকৃতিক বিধান তালাশ করতে হয়,
তেমনি ব্যক্তি
ও সমাজ
জীবনের সঠিক
ব্যবস্থার জন্যও তাঁরই শরণাপন্ন হওয়া
ছাড়[ উপায়
নেই। আল্লাহ
আছেন অথচ
সর্বজ্ঞ নন
বা সর্বাবস্থায়
নেই- একথার
চেয়ে অযৌক্তিক
সিদ্ধান্ত আর কি হতে পারে
? হয় আল্লাহ
নেই, আর
না হয়
সর্বত্রই আছে।
তিনি মন্দির
ও মসজিদে
আছেন, আর
আদালত ও
ফৌজদারীতে, আইন সভায়, রাজনৈতিক ও
ব্যবসা বাণিজ্যের
ক্ষেত্রে তাঁর
অস্তিত্ব নেই-
একথা একমাত্র
নির্বোধেরাই মেনে নিতে প্রস্তুত হতে
পারে। সুতরাং
আল্লাহকে স্বীকার
করলে তাঁকে
জীবনের সর্বক্ষেত্রে
আইনদাতা হিসাব
মানতে হবে।
(৪) ব্যক্তি
জীবনে ধর্মীয়
বিধান মেনে
চলা এবং
সমাজ জীবনকে
ধর্মের প্রভাব
থেকে মুক্ত
রাখার মতবাদ
অত্যন্ত দুরভিসন্ধিমূলক
। যারা
এ মতবাদের
প্রচারক তারা
ব্যক্তি জীবনেও
ধর্মের বন্ধন
স্বীকার করতে
রাজী হয়
না। “ধর্ম
যদি ব্যক্তিগত
ব্যাপার বলেই
স্বীকার কর
তাহলে তোমরা
ব্যক্তি জীবনেও
ধর্মকে মেনে
চলো না
কেন?” ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীকে
এই প্রশ্ন
করা হলে
উদারনীতির দোহাই দিয়ে বলে যে
এ প্রশ্ন
করাটাও সামাজিক
ব্যাপার ।
আপনি ব্যক্তিগত
জীবনে ধর্মকে
কতটা মেনে
চলেন তা
যেমন জিজ্ঞেস
করার অধিকার
নেই, আপনিও
আমার ব্যক্তি
জীবন নিয়ে
মাথা ঘামাবেন
না। এভাবে
অত্যন্ত কৌশলের
সাথে ধর্মকে
অস্বীকার করার
ফন্দি হিসাবেই
ধর্মনিরপেক্ষতার এ আযব মতবাদ প্রচার
করা হয়।
তাই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ
ও ধর্ম
বিরোধিতায় মূলতঃ কোন পার্থক্য নেই।
(৫) ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা
ব্যক্তি ও
সমাজ জীবনের
মধ্যে যে
ব্যবধানের উল্লেখ করেন তা সমাজ
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে চরম অবৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত।
নিতান্তই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত
হয়ে তারা
ইচ্ছাকৃতভাবে এ বিজ্ঞান বিরোধী মতবাদ
পোষণ করে
থাকেন। মানুষের
ব্যক্তি ও
সমাজ জীবনের
মাঝখানে ব্যবধানের
সীমারেখাটি কোথায়? সামাজিক জীব হিসাবে
মানুষের ব্যক্তি
জীবন সমাজ
থেকে কী
প্রকারে পৃথক
হতে পারে?
ধর্মীয় কারণে
যে ব্যক্তি
সত্যবাদী সে
তার সত্যবাদিতা
সমাজ জীবনেই
প্রয়োগ করবে।
কিন্তু অপর
ব্যক্তির সাথে
সামাজিক জীবন
যাপনের বেলায়
মিথ্যুক বলে
সাব্যস্ত হলে
ব্যক্তিগতভাবে সত্যবাদী হওয়ার উপায় কি?
ব্যক্তি জীবনে
চরিত্রবান ও চরিত্রহীন হওয়ার কোন
উপায় নেই।
কেউ ব্যক্তি
জীবনে গুন্ডা
হয়েও রাজনৈতিক
জীবনে সৎ
হতে পারবে
কি? সমাজ
জীবনে ঘুষখোর
ও দুর্নীতিবাজ
ব্যক্তি জীবনে
ধার্মিক বলে
স্বীকৃত হতে
পারে কি?
প্রত্যেকটি মানুষই জন্ম থেকে মৃত্যু
পর্যন্ত যাবতীয়
বিষয়ে এক
বা একাধিক
ব্যক্তির সাথে
সম্পর্কিত । তার জীবনে এমন
কোন ব্যাপারই
থাকতে পারে
না যা
অন্য কোন
মানুষের সাথে
কোন সম্পর্ক
রাখে না।
নির্জনে বসে
এক ব্যক্তি
যা চিন্তা
করে সেখানেও
সমাজ থেকে
সে বিচ্ছিন্ন
হয় না।
সে যে
কোন কাজেই
করুক তার
কোন না
কোন সামাজিক
পরিণাম নিশ্চয়ই
দেখা যাবে।
মানুষে মানুষে পারস্পরিক সম্পর্কের নামই
সমাজ ।
ব্যক্তিগতভাবে ধর্মেও অনুশাসন মেনে চলতে
যারা রাজী
তারা পারস্পরিক
সম্পর্কের বেলায় ধর্মকে কিরূপে অস্বীকার
করবে? আর
যদি অস্বীকারই
করে তাহলে
ধর্মকে স্বীকার
করা হল
কোথায় ? ব্যক্তিগণ
পৃথক পৃথকভাবে
ধর্মকে মেনে
চলবে, কিন্তু
তাদের পারস্পরিক
সম্পর্কের বেলায় আর ধর্মের প্রভাব
স্বীকার করবে
না-একথা
কী প্রকারে
যুক্তিসম্মত বলে গ্রহণ করা যায়
?
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ সকল দিক
দিয়েই যুক্তির
সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
আল্লাহকে জীবনের
কোন ক্ষেত্রে
দখল দেয়া
বা কোন
কোন বিভাগে
বেদখল করার
কারো ইখতিয়ার
নেই। ধর্মস্থানের
বাইরে মানব
জীবনের বিশাল
ময়দানে আল্লাহর
উপর ১৪৪
ধারা জারী
করার এ
অপচেষ্টা জীবন
সম্পর্কে ভোগবাদী
দৃষ্টিভঙ্গীরই সৃষ্টি।
ধর্ম মানুষকে
যেসব নৈতিকতার
বন্ধন মেনে
চলবার নির্দেশ
দেয়, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী
ভোগ বিলাসীদের
পক্ষে তা
পালন করা
সম্ভব নয়
বলেই তারা
এ চোরা
পথ সন্ধান
করে নিয়েছে
। জীবনকে
নৈতিকতার ঝামেলা
থেকে মুক্ত
করে আযাদ
জীবন যাপনের
সস্তা সুবিধাটুকু
উপভোগ করতে
হলে ধর্মকে
ব্যক্তিগত ব্যাপারে পরিণত করা ছাড়া
তাদের আর
কোন উপায়ই
নেই ।
সুতরাং এ
মতবাদ যে
মানুষের সদিচ্ছার
সৃষ্টি নয়,
তা বলাই
বাহুল্য ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন