আল মাআরিজ-70
|
১.)
এক প্রার্থনাকারী আযাব প্রার্থনা করেছে১
|
|
২.)
যে আযাব কাফেরের জন্য অবধারিত। তা প্রতিরোধ করার কেউ নেই।
|
|
৩.)
আল্লাহর পক্ষ থেকে, যিনি উর্ধ্বারোহণের সোপান সমূহের অধিকারী২
|
|
|
৫.)
অতএব, হে নবী, তুমি উত্তম ধৈর্য ধারণ করো। ৬
|
|
৬.)
তারা সেটিকে অনেক দূরে মনে করেছে।
|
|
৭.)
কিন্তু আমি দেখছি তা নিকটে।৭
|
|
|
৯.)
আর পাহাড়সমূহ রংবেরং-এর ধুনিত পশমের মত হয়ে যাবে। ১০
|
|
১০.)
কোন পরম বন্ধুও বন্ধুকে জিজ্ঞেস করবে না।
|
|
১১.)
অথচ তাদেরকে পরস্পরে দৃষ্টি সীমার মধ্যে রাখা হবে।১১ অপরাধী সেদিনের আযাব থেকে মুক্তির বিনিময়ে তার সন্তান-সন্ততিকে,
|
|
১২.)
স্ত্রীকে, ভাইকে এবং
|
|
১৩.)
তাকে আশ্রয়দানকারী জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর আপনজনকে
|
|
১৪.)
এমনকি, পৃথিবীর সবকিছুই দিতে চাইবে।
|
|
১৫.)
কখনো নয়, তা তো হবে জলন্ত আগুনের লেলিহান শিখা
|
|
১৬.)
যা শরীরের গোশত ও চামড়া ঝলসিয়ে নিঃশেষ করে দেবে।
|
|
১৭.)
তাদেরকে সে অগ্নিশিখা উচ্চ স্বরে নিজের কাছে ডাকবে, যারা সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছিল
|
|
১৮.)
আর সম্পদ জমা করে ডিমে তা দেয়ার মত করে আগলে রেখেছিল ১২
|
|
১৯.)
মানুষকে ছোট মনের অধিকারী করে সৃষ্টি করা হয়েছে।১৩
|
|
২০.)
বিপদ-মুসিবতে পড়লেই সে ঘাবড়ে যায়,
|
|
২১.)
আর যে-ই সচ্ছলতার মুখ দেখে অমনি সে কৃপণতা করতে শুরু করে।
|
|
২২.)
তবে যারা নামায পড়ে ১৪ (তারা এ দোষ থেকে মুক্ত) ।
|
|
২৩.)
যারা নামায আদায়ের ব্যাপারে সবসময় নিষ্ঠাবান।১৫
|
|
২৪.)
যাদের সম্পদে নির্দিষ্ট হক আছে
|
|
২৫.)
প্রার্থী ও বঞ্চিতদের।১৬
|
|
২৬.)
যারা প্রতিফলের দিনটিকে সত্য বলে মানে। ১৭
|
|
২৭.)
যারা তাদের প্রভুর আযাবকে ভয় করে।১৮
|
|
২৮.)
কারণ তাদের প্রভুর আযাব এমন বস্তু নয় যে সম্পর্কে নির্ভয় থাকা যায়।
|
|
২৯.)
যারা নিজেদের লজ্জাস্থান নিজের স্ত্রী অথবা মালিকানাধীন স্ত্রীলোকদের ছাড়া অন্যদের থেকে হিফাযত করে। ১৯
|
|
৩০.)
স্ত্রী ও মালিকানাধীন স্ত্রীলোকদের ক্ষেত্রে তারা তিরস্কৃত হবে না।
|
|
৩১.)
তবে যারা এর বাইরে আর কেউকে চাইবে তারা সীমালংঘনকারী।২০
|
|
৩২.)
যারা আমানত রক্ষা করে ও প্রতিশ্রুতি পালন করে।২১
|
|
৩৩.)
আর যারা সাক্ষ্য দানের ক্ষেত্রে সততার ওপর অটল থাকে। ২২
|
|
৩৪.)
যারা নামাযের হিফাযত করে।২৩
|
|
৩৫.)
এসব লোক সম্মানের সাথে জান্নাতের বাগানসমূহে অবস্থান করবে।
|
|
৩৬.)
অতএব হে নবী, কি ব্যাপার যে, এসব কাফের তোমার দিকে ছুটে আসছে?২৪
|
|
৩৭.)
ডান দিকে ও বাম দিক হতে দলে দলে
|
|
৩৮.)
তাদের প্রত্যেকে কি এ আশা করে যে, তাকে প্রাচুর্যে ভরা জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হবে?২৫
|
|
৩৯.)
কখখনো না। আমি যে জিনিস দিয়ে তাদের সৃষ্টি করেছি তারা নিজেরা তা জানে।২৬
|
|
|
৪১.)
আমাকে পেছনে ফেলে যেতে পারে এমন কেউ-ই নেই।২৯
|
|
৪২.)
অতএব তাদেরকে অর্থহীন কথাবার্তা ও খেল- তামাসায় মত্ত থাকতে দাও, যেদিনটির
প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেয়া হচ্ছে যতদিন না সেদিনটির সাক্ষাত তারা পায়।
|
|
৪৩.)
সেদিন তারা কবর থেকে বেরিয়ে এমনভাবে দৌড়াতে থাকবে যেন তারা নিজেদের দেব-প্রতিমার আস্তানার দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে।৩০
|
|
৪৪.)
সেদিন চক্ষু হবে আনত, লাঞ্চনা তাদের আচ্ছন্ন করে রাখবে। ঐ দিনটিই সেদিন যার প্রতিশ্রুতি এদেরকে দেয়া হচ্ছে।
|
নামকরণ
সূরার তৃতীয় আয়াতের ذِى الْمَعَارِجْ যিল মা'আরিজি শব্দটি থেকে এর নামকরণ হয়েছে।
নাযিল হওয়ার সময়-কাল
কাফেররা কিয়ামত, আখেরাত এবং দোযখ ও বেহেশত সম্পর্কিত বক্তব্য নিয়ে
বিদ্রূপ ও উপহাস করতো এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ
মর্মে চ্যালেঞ্জ করতো যে, তুমি যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো আর তোমাকে
অস্বীকার করে আমরা জাহান্নামের শাস্তিলাভের উপযুক্ত হয়ে থাকি তাহলে তুমি
আমাদেরকে যে কিয়ামতের ভয় দেখিয়ে থাকো তা নিয়ে এসো। যে কাফেররা এসব কথা
বলতো এ সূরায় তাদের সতর্ক করা হয়েছে এবং উপদেশ বাণী শোনানো হয়েছে। তাদের
এ চ্যালেঞ্জের জবাবে এ সূরার গোটা বক্তব্য পেশ করা হয়েছে।
সূরার প্রথমে বলা হয়েছে প্রার্থনাকারী আযাব প্রার্থনা করছে। নবীর দাওয়াত
অস্বীকারকারীর ওপর সে আযাব অবশ্যই পতিত হবে। আর যখন আসবে তখন কেউ তা
প্রতিরোধ করতে পারবে না। তবে তার আগমন ঘটবে নির্ধারিত সময়ে। আল্লাহর কাজে
দেরী হতে পারে। কিন্তু তার কাছে বেইনসাফী বা অবিচার নেই। কিন্তু আমি দেখছি
তা অতি নিকটে।
এরপর বলা হয়েছে, এসব লোক হাসি-ঠাট্টাচ্ছলে কিয়ামত দ্রুত নিয়ে আসার দাবি
করছে। অথচ কত কঠোর ও ভয়ানক সেই কিয়ামত।যখন তা আসবে তখন এসব লোকের কি যে
ভয়ানক পরিণতি হবে। সে সময় এরা আযাব থেকে বাঁচার জন্য নিজের স্ত্রী,
সন্তান-সন্তুতি এবং নিকট আত্মীয়দেরকে বিনিময় স্বরূপ দিয়ে দেয়ার জন্য
প্রস্তুত হয়ে যাবে। কিন্তু কোনভাবেই আযাব থেকে নিষ্কৃতি লাভ করতে পারবে
না।
এরপর মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, সেদিন মানুষের ভাগ্যের ফায়সালা হবে
সম্পূর্ণরূপে তাদের আকীদা-বিশ্বাস নৈতিক চরিত্র ও কৃতকর্মের ভিত্তিতে।
দুনিয়ার জীবনে যারা ন্যায় ও সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং ধন-সম্পদ জমা
করে ডিমে তা দেয়ার মত সযত্নে আগলে রেখেছে তারা হবে জাহান্নামের উপযুক্ত। আর
যারা আল্লাহর, আযাবের ভয়ে ভীত থেকেছে। আখেরাতকে বিশ্বাস করেছে, নিয়মিত
নামায পড়েছে, নিজের উপার্জিত সম্পদ দিয়ে আল্লাহর অভাবী বান্দাদের হক আদায়
করেছে, ব্যভিচার থেকে নিজেকে মুক্ত রেখেছে, আমানতের খেয়ানত করেনি, ওয়াদা ও
প্রতিশ্রুতি এবং কথাও কাজ যথাযথভাবে রক্ষা করে চলেছে এবং সাক্ষ্যদানের
বেলায় সত্যবাদিতার ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকেছে তারা সম্মান ও মর্যাদার সাথে
জান্নাতে স্থান লাভ করবে।
পরিশেষে মক্কার কাফেরদের সাবধান করা হয়েছে যারা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখামাত্র বিদ্রূপ ও উপহাস করার জন্য চারদিক থেকে
ঝাঁপিয়ে পড়তো। তাদেরকে বলা হয়েছে যদি তোমরা তাঁকে না মানো তাহলে আল্লাহ
তা'আলা অন্যদেরকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই বলে উপদেশ দেয়া যেন তিনি এসব উপহাস- বিদ্রূপের
তোয়াক্কা না করেন। এরা যদি কিয়ামতের লাঞ্ছনা দেখার জন্যই জিদ ধরে থাকে
তাহলে তাদেরকে এ অর্থহীন তৎপরতায় লিপ্ত থাকতে দিন। তারা নিজেরাই এর দুঃখজনক
পরিণতি দেখতে পাবে।