আলাম নাশরাহ-94
|
১.)
হে নবী! আমি কি তোমার বক্ষদেশ তোমার জন্য উন্মুক্ত করে দেইনি?১
|
|
২.)
আমি তোমার ওপর থেকে ভারী বোঝা নামিয়ে দিয়েছি,
|
|
৩.)
যা তোমার কোমর ভেঙ্গে দিচ্ছিল।২
|
|
৪.)
আর তোমার জন্য তোমার খ্যাতির কথা বুলন্দ করে দিয়েছি।৩
|
|
৫.)
প্রকৃত কথা এই যে, সংকীর্ণতার সাথে প্রশস্ততাও রয়েছে।
|
|
৬.)
আসলে সংকীর্ণতার সাথে আছে প্রশস্ততাও।৪
|
|
৭.)
কাজেই যখনই অবসর পাও ইবাদাতের কঠোর শ্রমে লেগে যাও
|
|
৮.)
এবং নিজের রবেরই প্রতি মনোযোগ দাও।৫
|
নামকরণঃ
সূরার প্রথম শব্দ দু’টিকেই এর নাম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
নাযিলের সময়-কাল
সূরা আদ দুহার সাথে এর বিষয়বস্তুর গভীর মিল দেখা যায়। এ থেকে মনে হয় এ সূরা
দু’টি প্রায় একই সময়ে একই অবস্থার প্রেক্ষিতে নাযিল হয়। হযরত আবদুল্লাহ
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মক্কা মু’আযযমায় আদ্ দুহার পরেই এই সূরাটি নাযিল
হয়।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য
এ সূরাটির উদ্দেশ্যও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে
সান্ত্বনা দান করা। নবুয়াত লাভ করার পর ইসলামী দাওয়াতের কাজ শুরু করার সাথে
সাথেই তাঁকে যেসব অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়, নবুয়াত লাভের আগে তাঁকে কখনো
তেমনি অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়নি। তাঁর নিজের জীবনে এটি ছিল একটি
মহাবিপ্লব। নবুয়াতে পূর্ব জীবনে এ ধরনের কোন বিপ্লবের ধারণা ছিল না। তিনি
ইসলাম প্রচারে কাজ শুরু করার সাথে সাথেই দেখতে দেখতে সমগ্র সমাজ তাঁর দুশমন
হয়ে যায়। অথচ পূর্বে এই সমাজে তাঁকে বড়ই মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখা হতো।যেসব
আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, গোত্রীয় লোকজন ও মহল্লাবাসী ইতিপূর্বে তাঁকে
মাথায় তুলে রাখতো তারাই এখন তাঁকে গালিগালাজ করতে থাকে। মক্কার এখন আর কেউ
তাঁর কথা শুনতে প্রস্তুত ছিল না। পথে তাঁকে দেখলে লোকেরা শিস দিতো, যা তা
মন্তব্য করতো। প্রতি পদে পদে তিনি সংকটের সম্মুখীন হতে থাকেন। যদিও ধীরে
ধীরে এসব অবস্থার মোকাবেলা করতে তিনি অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। কিন্তু তবুও এই
প্রথম দিকের দিনগুলো তাঁর জন্য ছিল বড়ই কঠিন এবং এগুলো তাঁর মনোবল ভেঙ্গে
দেবার জন্য যথেষ্ট ছিল।
এ জন্য তাঁকে সান্ত্বনা দেবার উদ্দেশ্যে প্রথমে সূরা আদ দুহা এবং পরে এই সূরাটি নাযিল হয়।
এই সূরায় মহান আল্লাহ প্রথমেই তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন; আমি তোমাকে তিনটি
বিরাট বিরাট নিয়ামত দান করেছি। এগুলোর উপস্থিতিতে তোমার মানসিক দিক দিয়ে
ভেঙ্গে পড়ার কোন কারণ নেই। তার মধ্যে একটি হচ্ছে হৃদয়দেশ উন্মুক্ত করে
দেয়ার নিয়ামত। দ্বিতীয় নিয়ামতটি হচ্ছে, নবুয়াত লাভের পূর্বে যে ভারী বোঝা
তোমার কোমর ভেঙ্গে দিচ্ছিল তা কি আমি তোমার ওপর থেকে নামিয়ে দেইনি ?
তৃতীয়টি হচ্ছে, সুনাম ও সুখ্যাতিকে উঁচু আসনে প্রতিষ্ঠিত করার নিয়ামত। এই
নিয়ামতটি তাঁর চেয়ে বেশী আর কাউকে দেয়া তো দূরের কথা তাঁর সমানও কাউকে কখনো
দেয়া হয়নি। সামনের দিকের ব্যাখ্যার আমি এ তিনটি নিয়ামত বলতে কি বুঝানো
হয়েছে এবং এগুলো কত বড় নিয়ামত ছিল তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি।
এরপর বিশ্ব- জাহানের প্রভু তাঁর বান্দা ও রসূলকে এই মর্মে নিশ্চিন্ততা দান
করেছেন যে, সমস্যা ও সংকটের যে যুগের মধ্য দিয়ে তুমি এগিয়ে চলছো এটা কোন
সুদীর্ঘ যুগ নয়। বরং এখানে সমস্যা, সংকট ও সংকীর্ণতার সাথে সাথে প্রশস্ততার
যুগও চলে আসছে। এই এক কথাই সূরা আদ্ দুহায় এভাবে বলা হয়েছেঃ তোমার জন্য
প্রত্যেকটি পরবর্তী যুগ পূর্ববর্তী যুগের চেয়ে ভালো হবে এবং শীঘ্রই তোমার
রব তোমাকে এমন সবকিছু দেবেন যাতে তোমার মন খুশীতে ভরে যাবে।
সবশেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উপদেশ দেয়া হয়েছে যে,
প্রাথমিক যুগের এসব কঠিন অবস্থার মোকাবেলা করার শক্তি তোমার মধ্যে সৃষ্টি
হবে একটি মাত্র জিনিসের সাহায্যে। সেটি হচ্ছেঃ নিজের কাজ-কর্ম থেকে ফুরসত
পাবার সাথে সাথেই তুমি পরিশ্রম পূর্ণ ইবাদাত ও আধ্যাত্মিক সাধনায় লিপ্ত হয়ে
যাও। আর সমস্ত জিনিসের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজের রবের সাথে সম্পর্ক
স্থাপন করো এটি সেই একই উপদেশের পুনরাবৃত্তি যা সূরা মুয্যামমিলের ৯ আয়াতে
আরো বেশী বিস্তারিতভাবে তাঁকে দান করা হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন