আত তীন-95
|
১.)
তীন ও যায়তূন,১
|
|
২.)
সিনাই পর্বত২
|
|
৩.)
এবং এই নিরাপদ নগরীর (মক্কা) কসম।
|
|
৪.)
আমি মানুষকে পয়দা করেছি সর্বোত্তম কাঠামোয়।৩
|
|
৫.)
তারপর তাকে উল্টো ফিরিয়ে নীচতমদেরও নীচে পৌঁছিয়ে দিয়েছি৪
|
|
৬.)
তাদেরকে ছাড়া যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করতে থাকে। কেননা তাদের রয়েছে এমন পুরস্কার যা কোনদিন শেষ হবে না।৫
|
|
৭.)
কাজেই (হে নবী!) এরপর পুরস্কার ও শাস্তির ব্যাপারে কে তোমাকে মিথ্যাবাদী বলতে পারে?৬
|
|
৮.)
আল্লাহ কি সব শাসকের চাইতে বড় শাসক নন?
|
নামকরণ
সূরার প্রথম শব্দ আত্ তীন ( التِّيۡنَ ) ---কে এর নাম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
নাযিলের সময়-কাল
কাতাদাহ এটিকে মাদানী সূরা বলেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে এ ব্যাপারে দু’টি
বক্তব্য উদ্ধৃত হয়েছে। একটি বক্তব্য একে মক্কী এবং অন্যটিতে মাদানী বলা
হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ আলেম একে মক্কী গণ্য করেছেন। এর মক্কী হবার সুস্পষ্ট
আলামত হচ্ছে এই যে, এই সূরায় মক্কা শহরের জন্য (هٰذَا الۡبَلَدِ الۡاَمِيۡنَ )
(এই নিরাপদ শহরটি) শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। একথা সুস্পষ্ট, যদি মদীনায় এটি
নাযিল হতো তাহলে মক্কার জন্য “এই শহরটি” বলা ঠিক হতো না। তাছাড়াও সূরার
বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা করলে এটিকে মক্কা মু’আয্যমারও প্রথম দিকে
সূরাগুলোর অন্তর্ভুক্ত বলে মনে হয়। কারণ এর নাযিলের সময় কুফর ও ইসলামের
সংঘাত শুরু হয়ে গিয়েছিল এমন কোন চিহ্নও এতে পাওয়া যায় না। বরং এর মধ্যে
মক্কী যুগের প্রথম দিকের সূরাগুলোর মতো একই বর্ণনাভংগী পাওয়া যায়। এই ধরনের
বর্ণনার মাধ্যমে অতি সংক্ষেপে এবং অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী পদ্ধতিতে লোকদেরকে
বুঝানো হয়েছে যে, আখেরাতের পুরস্কার ও শাস্তি অপরিহার্য এবং একান্ত
যুক্তিসঙ্গত।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য
এর বিষয়বস্তু হচ্ছে পুরস্কার ও শাস্তির স্বীকৃতি। এই উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথম
মহান মর্যাদাশালী নবীগণের আত্মপ্রকাশের স্থানসমূহের কসম খেয়ে বলা হয়েছে,
মহান আল্লাহ মানুষকে সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করেছেন। এই বাস্তব বিষয়টি
কুরআন মজীদের অন্যান্য স্থানে বিভিন্ন পদ্ধতিতে বর্ণনা হয়েছে। যেমন কোথাও
বলা হয়েছেঃ মানুষকে আল্লাহ পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি করেছেন এবং
ফেরেশতাদেরকে তার সামনে সিজদা করার হুকুম দিয়েছেন। (আল বাকারাহ ৩০- ৩৪, আর
আ’রাফ ১১, আল আন’আম ১৬৫, আল হিজর ২৪-২৯, আন নামল ৬২, সা’দ ৭১-৭৩ আয়াত)
কোথাও বলা হয়েছেঃ মানুষ আল্লাহর এমন একটি আমানতের বাহক হয়েছে যা বহন করার
শক্তি পৃথিবী, আকাশ ও পাহাড় কারো ছিল না। (আল আহযাব ৭২ আয়াত) আবার কোথাও
বলা হয়েছেঃ আমি বনী আদমকে মর্যাদাশালী করেছি এবং নিজের বহু সৃষ্টির ওপর
তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (বনী ইসরাঈল ৭০ আয়াত) কিন্তু এখানে বিশেষ করে
নবীগণের আত্মপ্রকাশের স্থানগুলোর কসম খেয়ে বলা হয়েছে, মানুষকে সর্বোত্তম
কাঠামোয় সৃষ্টি করা হয়েছে। এর অর্থ এই দাঁড়ায়, মানুষকে এমন উত্তম কাঠামোয়
সৃষ্টি করা হয়েছে যার ফলে তার মধ্যে নবুওয়াতের মত সর্বাধিক উন্নত পদমর্যাদা
সম্পন্ন লোক জন্ম নিয়েছে। আর এই নবুওয়াতের চাইতে উঁচু পদমর্যাদা আল্লাহর
অন্য কোন সৃষ্টি লাভ করেনি।
এরপর বলা হয়েছে, দুনিয়ায় দুই ধরনের মানুষ পাওয়া যায়। এক ধরনের মানুষ এই
সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি হবার পর দুষ্কৃতির দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং নৈতিক
অধপতনের মধ্যে তলিয়ে যেতে যেতে একেবারে সর্বনিম্ন গভীরতায় পৌঁছে যায়।
সেখানে তাদের চাইতে নীচে আর পৌঁছতে পারে না। দ্বিতীয় ধরনের মানুষ ঈমান ও
সৎকাজের পথ অবলম্বন করে এই পতন থেকে রক্ষা পায়। তাদেরকে সর্বোত্তম কাঠামোয়
সৃষ্টি করার অপরিহার্য দাবি যে উন্নত স্থান সে স্থানেই তারা প্রতিষ্ঠিত
থাকে। মানবজাতির মধ্যে এই দুই ধরনের লোকের অস্তিত্ব এমন একটি বাস্তব সত্য
যাকে কোনক্রমেই অস্বীকার করা যেতে পারে না। কারণ মানুষের সমাজে সব জায়গায়
সবসময় এটি দেখা যাচ্ছে।
সবশেষে এই বাস্তব সত্যটির মাধ্যমে প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে,
মানুষের মধ্যে যখন এই দু’টি আলাদা আলাদা এবং পরস্পর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন
ধরনের মানুষ পাওয়া যায় তখন কাজের প্রতিদানের ব্যাপারটি কেমন করে অস্বীকার
করা যেতে পারে? যারা অধপতনের গভীর গর্তে নেমে গেছে এবং যারা উন্নতির উচ্চতম
শিখরে পৌঁছে গেছে তাদেরকে যদি কোন প্রতিদান না দেয়া হয় এবং উভয় দলের
পরিণতি একই হয়, তাহলে এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, আল্লাহর রাজত্বে কোন ইনসাফ
নেই। অথচ শাসককে ইনসাফ অবশ্যি করতে হবে, এটা মানুষের সাধারণ জ্ঞান এবং
মানবিক প্রকৃতির দাবী। এক্ষেত্রে আল্লাহ যিনি সকল শাসকের বড় শাসক তিনি
ইনসাফ করবেন না, একথা কেমন করে কল্পনা করা যেতে পারে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন