সোমবার, ২ মার্চ, ২০১৫

আল কিয়ামাহ-75

আল কিয়ামাহ-75 
 
১.) না, আমি শপথ করেছি কিয়ামতের দিনের।
 
২.) আর না, আমি শপথ করছি তিরস্কারকারী নফসের।
 
৩.) মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার হাড়সমূহ একত্র করতে পারবো না?
 
৪.) কেন পারবো না? আমি তো তার আংগুলের জোড়গুলো পর্যন্ত ঠিকমত পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।
 
৫.) কিন্তু মানুষ ভবিষ্যতেও কুকর্ম করতে চায়।
 
৬.) সে জিজ্ঞেস করে, কবে আসবে কিয়ামতের সেদিন?
 
৭.) অতঃপর চক্ষু যখন স্থির হয়ে যাবে।
 
৮.) চাঁদ আলোহীন হয়ে পড়বে
 
৯.) এবং চাঁদ ও সূর্যকে একত্র করে একাকার করে দেয়া হবে।
 
১০.) সেদিন এ মানুষই বলবে, পালাবার স্থান কোথায়?
 
১১.) কখ্খনো না, সেখানে কোন আশ্রয়স্থল থাকবে না।
 
১২.) সেদিন তোমার রবের সামনেই গিয়ে দাঁড়াতে হবে।
 
১৩.) সেদিন মানুষকে তার আগের ও পরের কৃতকর্মসমূহ জানিয়ে দেয়া হবে।
 
১৪.) বরং মানুষ নিজে নিজেকে খুব ভাল করে জানে।
 
১৫.) সে যতই অজুহাত পেশ করুক না কেন।১০
 
১৬.) হে নবী,১১ এ অহীকে দ্রুত আয়ত্ত করার জন্য তোমার জিহবা দ্রুত সঞ্চালন করো না।
 
১৭.) তা মুখস্ত করানো ও পড়ানো আমারই দায়িত্ব।
 
১৮.) তাই আমি যখন তা পড়ি১২ তখন এর পড়া মনযোগ দিয়ে শুনবে।
 
১৯.) অতঃপর এর অর্থ বুঝিয়ে দেয়াও আমার দায়িত্ব।১৩
 
২০.) কখ্খনো না ১৪ আসল কথা হলো, তোমরা দ্রুত লাভ করা যায় এমন জিনিসকেই (অর্থাৎ দুনিয়া) ভালবাস
 
২১.) এবং আখেরাতকে উপেক্ষা করে থাকো।১৫
 
২২.) সেদিন কিছু সংখ্যক চেহারা তরতাজা থাকবে।১৬
 
২৩.) নিজের রবের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখবে।১৭
 
২৪.) আর কিছু সংখ্যক চেহারা থাকবে উদাস-বিবর্ণ।
 
২৫.) মনে করতে থাকবে যে, তাদের সাথে কঠোর আচরণ করা হবে।
 
২৬.) কখ্খনো না,১৮ যখন প্রাণ কণ্ঠনালীতে উপনীত হবে
 
২৭.) এবং বলা হবে, ঝাঁড় ফুঁক করার কেউ আছে কি?১৯
 
২৮.) মানুষ বুঝে নেবে এটা দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার সময়।
 
২৯.) উভয় পায়ের গোছা বা নলা একত্র হয়ে যাবে।২০
 
৩০.) সেদিনটি হবে তোমার প্রভুর কাছে যাত্রা করার দিন।
 
৩১.) কিন্তু সে সত্যকে অনুসরণও করেনি। নামাযও পড়েনি।
 
৩২.) বরং সে অস্বীকার করেছে ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
 
৩৩.) তারপর গর্বিত ভঙ্গিতে নিজের পরিবার পরিজনের কাছে ফিরে গিয়েছে।২১
 
৩৪.) এ আচরণ তোমার পক্ষেই শোভনীয় এবং তোমার পক্ষেই মানানসই।
 
৩৫.) হ্যাঁ,, এ আচরণ তোমার পক্ষেই শোভনীয় এবং তোমার পক্ষেই মানানসই।২২
 
৩৬.) মানুষ ২৩ কি মনে করে যে, তাকে এমনি ছেড়ে দেয়া হবে?২৪
 
৩৭.) সে কি বীর্যরূপ এক বিন্দু নগণ্য পানি ছিল না যা (মায়ের জরায়ুতে) নিক্ষিপ্ত হয়।
 
৩৮.) অতঃপর তা মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়। তারপর আল্লাহ‌ তার সুন্দর দেহ বানালেন এবং তার অংগ-প্রতংগগুলো সুসামঞ্জস্য করলেন।
 
৩৯.) তারপর তা থেকে নারী ও পুরুষ দু"রকম মানুষ বানালেন।
 
৪০.) সেই স্রষ্টা কি মৃতদের পুনরায় জীবিত করতে সক্ষম নন?

নামকরণ

সূরার প্রথম আয়াতের الۡقِيٰمَةِۙ আলকিয়ামহ শব্দটিকে এ সূরার নাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এটি শুধু সূরাটির নামই নয়, বরং বিষয়ভিত্তিক শিরোনামও। কারণ এ সূরায় শুধু কিয়ামত সম্পর্কে আলোচন করা হয়েছে।

নাযিল হওয়ার সময়-কাল

কোন হাদীস থেকে যদিও এ সূরার নাযিল হওয়ার সময়-কাল জানা যায় না। কিন্তু এর বিষয়বস্তুর মধ্যেই এমন একটি প্রমাণ বিদ্যমান যা থেকে বুঝা যায়, এটি নবুয়াতের একেবারে প্রথম দিকে অবতীর্ণ সূরাসমূহের অন্যতম। সূরার ১৫ আয়াতের পর হঠাৎ ধারাবাহিকতা ক্ষুন্ন করে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে বলা হচ্ছেঃ এ অহীকে দ্রুত মুখস্ত করার জন্য তুমি জিহবা নাড়বে না। এ বাণীকে স্মরণ করিয়ে দেয়া এবং পড়িয়ে দেয়া আমার দায়িত্ব। অতএব আমি যখন তা পড়ি তখন তুমি তা মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকো। এর অর্থ বুঝিয়ে দেয়াও আমার দায়িত্ব। এরপর ২০ নম্বর আয়াত থেকে আবার সে পূর্বের বিষয়ে আলোচনা শুরু হচ্ছে যা প্রথম থেকে ১৫ নম্বর আয়াত পর্যন্ত চলছিল। সে সময় হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম এ সূরাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শুনাচ্ছিলেন পরে ভুলে যেতে পারেন এ আশংকায় তিনি এর কথাগুলো বার বার মুখে আওড়াচ্ছিলেন।এ কারণে পূর্বাপর সম্পর্কহীন এ বাক্যটি পরিবেশ ও পরিস্থিতি এবং হাদীসের বর্ণনা উভয় দিক থেকেই বক্তব্যের মাঝখানে সন্নিবেশিত হওয়া যথার্থ হয়েছে। এ থেকে জানা যায় যে, এ ঘটনা সে সময়ের যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবে মাত্র অহী নাযিলের নতুন নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করছেন এবং অহী গ্রহণের পাকাপোক্ত অভ্যাস তাঁর তখনো ও গড়ে ওঠেনি। কুরআন মজীদে এর আরো দু’টি দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। একটি সূরা ত্বা-হা যেখানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাহকে সম্বোধন করে বলা হয়েছেঃ
------------------------
"আর দেখো, কুরআন পড়তে তাড়াহুড়া করো না, যতক্ষণ না তোমাকে অহী পূর্ণরূপে পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। (আয়াত ১১৪)
দ্বিতীয়টি সূরা আ'লায়। এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়েছেঃ-------------"আমি অচিরেই তোমাকে পড়িয়ে দেব তারপর তুমি আর ভুলে যাবে না।"(আয়াত ৬) পরবর্তী সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অহী গ্রহনে ভালভাবে অভ্যস্ত হয়ে গেলে এ ধরনের নির্দেশনা দেয়ার আর প্রয়োজন থাকেনি। তাই কুরআনের এ তিনটি স্থান ছাড়া এর আর কোন দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না।

বিষয়বস্তু ও মুলবক্তব্য

এ সূরা থেকে কুরআন মজীদের শেষ পর্যন্ত যতগুলো সূরা আছে তার অধিকাংশের বিষয়বস্তু ও বর্ণনাভঙ্গী থেকে বুঝা যায় যে, সূরা মুদ্দাস্সিরের প্রথম সাতটি আয়াত নাযিল হওয়ার পর যখন অবিশ্রান্ত ধারায় বৃষ্টি বর্ষণের মত কুরআন নাযিলের সিলসিলা শুরু হলো, এ সূরাটিও তখনকার অবতীর্ণ বলে মনে হয়। পর পর নাযিল হওয়া এসব সূরায় জোরালো এবং মর্মস্পর্শী ভাষায় অত্যন্ত ব্যাপক কিন্তু সংক্ষিপ্ত বাক্যে ইসলাম এবং তার মৌলিক আকীদা-বিশ্বাস ও নৈতিক শিক্ষাসমূহ পেশ করা হয়েছে এবং মক্কাবাসীদেরকে তাদের গোমরাহী সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে। এ কারণে কুরাইশ নেতারা অস্থির হয়ে যায় এবং প্রথম হজ্জের মওসুম আসার আগেই তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পরাভুত বা ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য নানা রকম ফন্দি-ফিকির ও কৌশল উদ্ভাবনের জন্য একটি সম্মেলনের আয়োজন করে। সূরা মুদ্দাস্সিরের ভূমিকায় আমরা এ বিষয়ের উল্লেখ করেছি।
এ সূরায় আখেরাত অবিশ্বাসীদের সম্বোধন করে তাদের এককেটি সন্দেহ ও একেকটি আপত্তি ও অভিযোগের জওয়াব দেয়া হয়েছে। অত্যন্ত মজবুত প্রমাণাদি পেশ করে কিয়ামত ও আখেরাতের সম্ভাব্যতা, সংঘটন ও অনিবার্যতা প্রমাণ করা হয়েছে। আর একথাও স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে যে, যে ব্যক্তিই আখেরাতকে অস্বীকার করে, তার অস্বীকৃতির মূল কারণ এটা নয় যে, তার জ্ঞানবুদ্ধি তা অসম্ভব বলে মনে করে। বরং তার মূল কারণ ও উৎস হলো, তার প্রবৃত্তি তা মেনে নিতে চায় না। সাথে সাথে মানুষকে এ বলে সাবধান করে দেয়া হয়েছে যে, যে সময়টির আগমনকে তোমরা অস্বীকার করছো তা অবশ্যই আসবে। তোমাদের সমস্ত কৃতকর্ম তোমাদের সামনে পেশ করা হবে। প্রকৃতপক্ষে আমলনামা দেখার পূর্বেই তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেই জানতে পারবে যে, সে পৃথিবীতে কি কি কাজ করে এসেছে। কেননা কোন মানুষই নিজের ব্যাপারে অজ্ঞ বা অনবহিত নয়। দুনিয়াকে প্রতারিত করার জন্য এবং নিজের বিবেককে ভুলানোর জন্য নিজের কাজকর্মও আচরণের পক্ষে যত যুক্তি, বাহানা ও ওযর সে পেশ করুক না কেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন