রবিবার, ১ মার্চ, ২০১৫

আল আদিয়াত-100

আল আদিয়াত-100 
 
১.) কসম সেই (ঘোড়া) গুলোর যারা হ্রেষারব সহকারে দৌড়ায়।
 
২.) তারপর (খুরের আঘাতে) আগুনের ফুলকি ঝরায়।
 
৩.) তারপর অতর্কিত আক্রমণ চালায় প্রভাতকালে।
 
৪.) তারপর এ সময় ধূলা উড়ায়
 
৫.) এবং এ অবস্থায় কোন জনপদের ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়ে।
 
৬.) আসলে মানুষ তার রবের প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ।
 
৭.) আর সে নিজেরই এর সাক্ষী।
 
৮.) অবশ্য সে ধন দৌলতের মোহে খুব বেশী মত্ত।
 
৯.) তবে কি সে সেই সময়ের কথা জানে না
 
১০.) যখন কবরের মধ্যে যা কিছু (দাফন করা) আছে সেসব বের করে আনা হবে এবং বুকের মধ্যে যা কিছু (লুকানো) আছে সব বের করে এনে যাচাই করা হবে?
 
১১.) অবশ্য সেদিন তাদের রব তাদের সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত থাকবেন।

নামকরণঃ

প্রথম শব্দ আল আদিয়াতকে (الۡعٰدِيٰتِ) এর নাম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

নাযিলের সময়-কাল

এই সূরাটির মক্কী বা মাদানী হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা., , জাবের (রা., , হাসান বসরী, ইকরামা ও আতা বলেন, এটি মক্কী সূরা। হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) ও কাতাদাহ একে মাদানী সূরা বলেন। অন্যদিকে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে দুই ধরনের মত উদ্ধৃত হয়েছে। তাঁর একটি মত হচ্ছে এটি মক্কী সূরা এবং অন্য একটি বক্তব্যে তিনি একে মাদানী সূরা বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সূরার বক্তব্য ও বর্ণনাভঙ্গী পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছে যে, এটি কেবল মক্কী সূরাই নয় বরং মক্কী যুগের প্রথম দিকে নাযিল হয়।

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য

মানুষ আখেরাতকে অস্বীকার করে অথবা তো থেকে গাফেল হয়ে কেমন নৈতিক অধঃপাতে যায় একথা লোকদের বুঝানোই এই সূরাটির উদ্দেশ্য। এই সঙ্গে আখেরাতে কেবল মানুষের বাইরের কাজকর্মই নয়, তাদের মনের গোপন কথাগুলোও যাচাই-বাছাই করা হবে, এ সম্পর্কেও এই সূরায় তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
এ উদ্দেশ্যে আরবে সাধারণভাবে যে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে ছিল এবং যার ফলে সমগ্র দেশবাসীর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল তাকে যুক্তি ও প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হয়েছে। সারা দেশের চতুর্দিকে নারকীয় হত্যাকাণ্ড চলছিল। লুন্ঠন, রাহাজানী, এক গোত্রের ওপর অন্য গোত্রের আকস্মিক আক্রমণের মাধ্যমে সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছিল। রাতে কোন ব্যক্তিও নিশ্চিন্তে চলাফেরা করতে পারতো না। কারণ সবসময় আশংকা থাকতো, এই বুঝি কোন দুশমন অতি প্রত্যুষে তাদের জনপদ আক্রমণ করে বসলো। দেশের এই অবস্থার কথা আরবের সবাই জানতো। তারা এসব ক্ষতি ও অনিষ্ট সম্পর্কে পুরোপুরি সজাগ ছিল। যার সবকিছু লুন্ঠিত হতো, সে এ অবস্থার জন্য মাতম করতো এবং যে লুন্ঠন করতো সে আনন্দে উৎফুল্ল হতো। কিন্তু এই লুন্ঠনকারী আবার যখন লুন্ঠিত হতো, তখন সেও অনুভব করতো, এ কেমন খারাপ অবস্থার মধ্যে কেমন দুর্বিসহ জীবন আমরা যাপন করে চলেছি।
এ পরিস্থিতির ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে, মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবন এবং সেখানে আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করার ব্যাপারে অজ্ঞতার কারণে মানুষ তার রবের প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়েছে। সে আল্লাহর দেয়া ক্ষমতাগুলোকে জুলুম নিপীড়নের কাজে ব্যবহার করছে। সে ধন সম্পদের প্রেমে অন্ধ হয়ে তা অর্জন করার জন্য যে কোন অন্যায়, অসৎ ও গর্হিত পন্থা অবলম্বন করতে কুন্ঠিত হয় না। তা অবস্থা নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছে সে নিজের রবের দেয়া শক্তিগুলোর অপব্যবহার করে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতাহীনতার প্রকাশ করছে। যদি সে সেই সময়ের কথা জানতো যখন কবর থেকে জীবিত হয়ে আবার উঠতে হবে এবং যেসব ইচ্ছা, উদ্দেশ্য ও স্বার্থ প্রবণতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সে দুনিয়ায় নানান ধরনের কাজ করেছিল সেগুলোকে তার মনের গভীর তলদেশ থেকে বের করে এনে সামনে রেখে দেয়া হবে, তাহলে সে এই দৃষ্টিভঙ্গী ও কর্মনীতি কখনই অবলম্বন করতে পারতো না দুনিয়ায় কে কি করে এসেছে এবং কার সাথে কোন ধরনের ব্যবহার করা উচিত মানুষের রব সে সময় সে কথা খুব ভালোভাবেই জানবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন