রবিবার, ১ মার্চ, ২০১৫

আত তাকাসুর-102

আত তাকাসুর-102
 
১.) বেশী বেশী এবং একে অপরের থেকে বেশী দুনিয়ার স্বার্থ লাভ করার মোহ তোমাদের গাফলতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
 
২.) এমনকি (এই চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে) তোমরা কবর পর্যন্ত পৌঁছে যাও।
 
৩.) কখ্খনো না, শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে।
 
৪.) আবার (শুনে নাও) কখ্খনো না শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে।
 
৫.) কখ্খনো না, যদি তোমরা নিশ্চিত জ্ঞানের ভিত্তিতে (এই আচরণের পরিণাম) জানতে (তাহলে তোমরা এ ধরনের কাজ করতে না)।
 
৬.) তোমরা জাহান্নাম দেখবেই।
 
৭.) আবার (শুনে নাও) তোমরা একেবারে স্থির নিশ্চিতভাবে তা দেখবেই।
 
৮.) তারপর অবশ্যই সেদিন তোমাদের এই নিয়ামতগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

নামকরণ

প্রথম শব্দ আত তাকাসুরকে (التَّكَاثُرُۙ) এই সূরার নাম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

নাযিলের সময়-কাল

আবু হাইয়ান ও শওকানী বলেন, সকল তাফসীরকার একে মক্কী সূরা গণ্য করেছেন। এ ব্যাপারে ইমাম সুয়ুতির বক্তব্য হচ্ছে, মক্কী সূরা হিসেবেই এটি বেশী খ্যাতি অর্জন করেছে। কিন্তু কিছু কিছু বর্ণনায় একে মাদানী সূরা বলা হয়েছে। যেমনঃ
ইমাম আবু হাতেম আবু বুরাইদার (রা.) রেওয়ায়াত উদ্ধৃত করেছেন। তাতে বলা হয়েছেঃ বনী হারেসা ও বনিল হারস নামক আনসারদের দু’টি গোত্রের ব্যাপারে এ সূরাটি নাযিল হয়। উভয় গোত্র পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতামূলকভাবে প্রথমে নিজেদের জীবিত লোকদের গৌরবগাঁথা বর্ণনা করে। তারপর কবরস্থানে গিয়ে মৃত লোকদের গৌরবগাঁথা বর্ণনা করে। তাদের এই আচরণের ফলে আল্লাহর এই বাণী (আরবী----------------------) নাযিল হয়। কিন্তু শানে নুযূল বা নাযিল হওয়ার কারণ ও উপলক্ষ্য বর্ণনার ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈগণ যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন তা সামনে রাখলে এই রেওয়ায়াত যে উপলক্ষ্যে বর্ণনা করা হয়েছে তাকে এই সূরা নাযিলের উপলক্ষ্য বলে মেনে নেবার সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। বরং এ থেকে এই অর্থ গ্রহণ করা যায় যে, এই দু’টি গোত্রের কর্মকাণ্ডের সাথে সূরাটি খাপ খেয়ে যায়।
ইমাম বুখারী ও ইবনে জারীর হযরত উবাই ইবনে কাবের (রা.) একটি উক্তি উদ্ধৃত করেছেন। তাতে তিনি বলেছেনঃ “আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ বাণীটিকে (আরবী----------------------) (বনী আদমের কাছে যদি দুই উপত্যকা সমান সম্পদ থাকে তারপরও সে তৃতীয় একটি উপত্যকা আকাঙ্ক্ষা করবে। আদম সন্তানের পেট মাটি ছাড়া আর কিছু দিয়ে ভরে না)--- কুরআনের মধ্যে মনে করতাম। এমনকি শেষ পর্যন্ত আল হাকুমুত তাকাসুর সূরাটি নাযিল হয়।” হযরত উবাই মদীনায় মুসলমান হয়েছিলেন বলে এই হাদীসটিকে সূরা আত তাকাসুরের মদীনায় অবতীর্ণ হবার সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হয়। কিন্তু হযরত উবাইর এই বক্তব্য থেকে সাহাবায়ে কেরাম কোন্ অর্থে রসূলের এই বাণীকে কুরআনের মধ্যে মনে করতেন তা সুস্পষ্ট হয় না। যদি এর অর্থ এই হয়ে থাকে যে, তারা একে কুরআনের একটি আয়াত মনে করতেন তাহলে একথা মেনে নেয়া যেতে পারে না। কারণ সাহাবীগণের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ কুরআনের প্রতিটি হরফ সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। এই হাদীসটিকে কুরআনের আয়াত মনে করার মতো ভুল ধারণা তাঁরা কেমন করে পোষণ করতে পারতেন! আর কুরআনের মধ্যে হবার মানে যদি কুরআন থেকে হওয়া মনে করা হয় তাহলে এই হাদীসটির এ অর্থও হতে পারে যে, মদীনা তাইয়েবায় যাঁরা মুসলমান হয়েছিলেন তাঁরা প্রথমবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র কণ্ঠে এই সূরা উচ্চারিত হতে শুনে মনে করেন, সূরাটি এই মাত্র নাযিল হয়েছে এবং রসূলের উপরোল্লিখিত বাণী সম্পর্কে তাঁরা মনে করতে থাকেন এটি এই সূরা থেকেই গৃহীত।
ইবনে জারীর, তিরমিযী ও ইবনুল মুনযির প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ হযরত আলীর (রা.) একটি উক্তি উদ্ধৃত করেছেন। তাতে তিনি বলেছেনঃ “কবরের আযাব সম্পর্কে আমরা সব সময় সন্দেহের মধ্যে ছিলাম। এমন কি শেষ পর্যন্ত ‘আলহা-কুমুত তাকাসুর’ নাযিল হলো। হযরত আলীর (রা.) এই বক্তব্যটিকে এই সূরার মাদানী হবার প্রমাণ হিসেবে গণ্য করার কারণ হচ্ছে এই যে, কবরের আযাবের আলোচনা মদীনায় শুরু হয়। মক্কায় এ সম্পর্কে কোন আলোচনাই হয়নি। কিন্তু একথাটি আসলে ঠিক নয়। কুরআনের মক্কী সূরাগুলোর বিভিন্ন স্থানে এমন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কবরের আযাবের কথা বলা হয়েছে যে, এ সম্পর্কে সন্দেহের কোন অবকাশই সেখানে নেই। উদাহরণ স্বরূপ দেখুন সূরা আন’আম ৯৩ আয়াত, আন নামল ২৮ আয়াত, আল মু’মিনূন ৯৯-১০০ আয়াত, আল মু’মিন ৪৫-৪৬ আয়াত। এগুলো সবই মক্কী সূরা। তাই হযরত আলীর (রা.) উক্তি থেকে যদি কোন জিনিস প্রমাণ হয় তাহলে তা হচ্ছে এই যে, উপরোল্লিখিত মক্কী সূরাগুলো নাযিলের পূর্বে সূরা আত তাকাসুর নাযিল হয় এবং এই সূরাটি নাযিল হবার ফলে সাহাবীগণের মধ্যে বিরাজিত কবরের আযাব সম্পর্কিত সংশয় দূর হয়ে যায়।
এ কারণে এই হাদীসগুলো সত্ত্বেও মুফাস্সিরগণের অধিকাংশই এর মক্কী হবার ব্যাপারে একমত। আমার মতে এটি শুধু মক্কী সূরাই নয় বরং মক্কী জীবনের প্রথম দিকে অবতীর্ণ সূরাগুলোর অন্যতম।

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য

এই সূরায় মানুষকে দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা ও বৈষয়িক স্বার্থ পূজার অশুভ পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এই ভালোবাসা ও স্বার্থ পূজার কারণে মানুষ মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বেশী বেশী ধন-সম্পদ আহরণ, পার্থিব লাভ, স্বার্থ উদ্ধার, ভোগ, প্রতিপত্তি, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভ এবং তার মধ্যে প্রতিযোগিতামূলকভাবে একজন আর একজনকে টপকে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। আর এসব অর্জন করার ব্যাপারে অহংকারে মত্ত থাকে। এই একটি মাত্র চিন্তা তাদেরকে এমনভাবে মশগুল করে রেখেছে যার ফলে এর চেয়ে উন্নততর কোন জিনিসের প্রতি নজর দেবার মানসিকতাই তাদের নেই। এর অশুভ পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দেবার পর লোকদেরকে বলা হয়েছে, এই যেসব নিয়ামত তোমরা নিশ্চিন্তে সংগ্রহ করতে ব্যস্ত, এগুলো শুধুমাত্র নিয়ামত নয় বরং এগুলো তোমাদের জন্য পরীক্ষার বস্তুও। এগুলোর মধ্য থেকে প্রত্যেকটি নিয়ামত সম্পর্কে তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন