আল কাদ্র-97
১.)
আমি এ (কুরআন) নাযিল করেছি কদরের রাতে।১
|
|
২.)
তুমি কি জানো, কদরের রাত কি?
|
|
৩.)
কদরের রাত হাজার মাসের চাইতেও বেশী ভালো।২
|
|
|
৫.)
এ রাতটি পুরোপুরি শান্তিময় ফজরের উদয় পর্যন্ত।
|
নামকরণ
প্রথম আয়াতের ‘আল কদর’ اَلْقَدْرٍ শব্দটিকে এর নাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
নাযিলের সময়-কাল
এর মক্কী বা মাদানী হবার ব্যাপারে দ্বিমত রয়ে গেছে। আবু হাইয়ান বাহরুল
মুহীত গ্রন্থে দাবী করেছেন, অধিকাংশ আলেমের মতে এটা মাদানী সূরা। আলী ইবনে
আহমাদুল ওয়াহেদী তাঁর তাফসীরে বলেছেন, এটি মদীনায় নাযিলকৃত প্রথম সূরা।
অন্যদিকে আল মাওয়ারদী বলেন, অধিকাংশ আলেমের মতে এটি মক্কী সূরা। ইমাম
সুয়ূতী ইতকান গ্রন্থে একথাই লিখেছেন। ইবনে মারদুইয়া, ইবনে আব্বাস (রাঃ),
ইবনে যুবাইর (রাঃ) ও হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে এ উক্তি উদ্ধৃত করেছেন যে,
সূরাটি মক্কায় নাযিল হয়েছিল। সূরার বিষয়বস্তু পর্যালোচনা করলেও একথাই
প্রতীয়মান হয় যে, এর মক্কায় নাযিল হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। সামনের আলোচনায় আমি
একথা সুস্পষ্ট করে তুলে ধরবো।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য
লোকদেরকে কুরআন মজীদের মূল্য, মর্যাদা ও গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করাই এই
সূরাটির বিষয়বস্তু। কুরআন মজীদের বিন্যাসের ক্ষেত্রে একে সূরা আলাকের পরে
রাখাই একথা প্রকাশ করে যে সূরা আলাকের প্রাথমিক পাঁচটি আয়াতের মাধ্যমে যে
পবিত্র কিতাবটির নাযিল শুরু হয়েছিল তা কেমন ভাগ্য নির্ণয়কারী রাতে নাযিল
হয়, কেমন মহান মর্যাদা সম্পন্ন কিতাব এবং তার এই নাযিল হওয়ার অর্থ কি এই
সূরায় সে কথাই লোকদেরকে জানানো হয়েছে।
প্রথমেই আল্লাহ্ বলেছেন, আমি এটি নাযিল করেছি। অর্থাৎ এটি মুহাম্মাদ ﷺ এর নিজের রচনা নয় বরং আমিই এটি নাযিল করেছি।
এরপর বলেছেন, কদরের রাতে আমার পক্ষ থেকে এটি নাযিল হয়েছে। কদরের রাতের
দু’টি অর্থ। দু’টি অর্থই এখানে প্রযোজ্য। এক, এটি এমন একটি রাত যে রাতে
তকদীরের ফায়সালা করা হয়। অথবা অন্য কথায় এটি সাধারণ রাতের মতো কোন মামুলি
রাত নয়। বরং ভাগ্যের ভাঙা গড়া চলে। এই রাতে এই কিতাব নাযিল হওয়া নিছক একটি
কিতাব নাযিল নয় বরং এটি শুধুমাত্র কুরাঈশ ও আরবের নয়, সারা দুনিয়ার ভাগ্য
পাল্টে দেবে। একথাটিই সূরা দুখানেও বলা হয়েছে (দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা
দুখানের ভূমিকা ও ৩ নম্বর টীকা) দুই, এটি বড়ই মর্যাদা, মহত্ত্ব ও
শ্রেষ্ঠত্বের রাত। সামনের দিকে এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এটি হাজার মাসের
চাইতেও উত্তম। এর সাহায্যে মক্কার কাফেরদেরকে পরোক্ষভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে
যে, তোমরা নিজেদের অজ্ঞতার কারণে মুহাম্মাদ ﷺ এর পেশকৃত এই কিতাবকে
নিজেদের জন্য একটি বিপদ মনে করেছো। তোমাদের ওপর এ এক আপদ এসে পড়েছে বলে
তোমরা তিরস্কার করছো। অথচ যে রাতে এর নাযিল হবার ফায়সালা জারী করা হয় সেটি
ছিল পরম কল্যাণ ও বরকতের রাত। এই একটি রাতে মানুষের কল্যাণের জন্য এত বেশী
কাজ করা হয়েছে যা মানুষের ইতিহাসে হাজার মাসেও করা হয়নি। একথাটি সূরা
দুখানের তৃতীয় আয়াতে অন্যভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সূরা দুখানের ভূমিকায় আমি এ
বিষয়টির ওপর আলোকপাত করেছি।
সবশেষে বলা হয়েছে, এই রাতে ফেরেশতারা এবং জিব্রাঈল (আঃ) নিজেদের রবের
অনুমতি নিয়ে সব রকমের আদেশ নির্দেশ সহকারে নাযিল হন। (সূরা দুখানের চতুর্থ
আয়তে একে اَمْرٍ حَكِيْمٍ জ্ঞানময় বা
সুষ্ঠু বিধান বলা হয়েছে, । সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত এটি হয় পুরোপুরি
শান্তি ও নিরাপত্তার রাত। অর্থাৎ কোনো প্রকার অনিষ্ট এ রাতে প্রভাব ফেলতে
পারে না। কারণ আল্লাহ্র সমস্ত ফায়সালার মূল লক্ষ্য হয় কল্যাণ। মানুষের
জন্য তার মধ্যে কোন অকল্যাণ থাকে না। এমনকি তিনি কোন জাতিকে ধ্বংস করার
ফায়সালা করলেও তা করেন মানুষের কল্যাণের জন্য, তার অকল্যাণের জন্য নয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন